গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যাথা
গ্যাস্ট্রিক থেকে পিঠে ব্যথা হলে এর কারণ হতে পারে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা যেমন অ্যাসিড রিফ্লাক্স, গ্যাস স্ট্রাইটিস এবং আলসারের মতো সমস্যা। গ্যাস্ট্রিক জনিত পিঠে ব্যথা দূর করার উপায় হলো প্রথমেই গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যার চিকিৎসা করা। এছাড়াও প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে এবং প্রতিদিন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। আরো বিস্তারিতভাবে জানতে চাইলে নিচের লেখাগুলো মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গ্যাস্ট্রিকের জন্য পিঠে ব্যথা হওয়ার কারণ
গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন হওয়ার কয়েকটি কারণ আছে। কারণগুলো হলো:
গ্যাস্ট্রাইটিস
পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন হওয়ার অন্যতম কারণ হলো গ্যাস্ট্রাইটিস। এটি পেটে ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং অম্বলের মতো লক্ষণ সৃষ্টি করতে পারে।
আলসার
আলসার হলো পেটের অভ্যন্তরীণ ঘা, যার কারণে পেটে ব্যথা এবং অস্বস্তি অনুভাব হয়। আর আলসারের কারণে পিঠে ব্যাথা বা ব্যাক পেইন হতে পারে।
গলব্লাডারের সমস্যা
মানবদেহে পিত্তথলির সমস্যার কারণে পিঠে ডান দিকে ব্যথাসহ বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে।
প্যানক্রিয়াটাইটিস
প্যানক্রিয়াটাইটিস হলো অগ্নাশয়ের প্রদাহ যার কারণে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
অ্যাসিড রিফ্লাক্স
অ্যাসিড রিফ্লাক্স হল পেটের একটি গুরুতর সমস্যা। মনে রাখতে হবে যে পেটে সবসময়ই অ্যাসিড থাকে। তাই যখন অ্যাসিড রিফ্লাক্স ঘটে তখন পেটের ভিতরের এসিড খাদ্যনালীতে প্রবাহিত হয়। যার কারণে পিঠে ব্যাথা ও বুকে ব্যথা অনুভব হতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক কারণে পিঠে ব্যথা হওয়ার লক্ষণ
পিঠে ব্যথা হলে সেটা গ্যাস্ট্রিকের কারণে হয়েছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়া যায় কয়েকটি লক্ষণ দ্বারা। লক্ষণগুলো হলো-
- খাবার খাওয়ার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- পেটে গ্যাস হওয়া বা পেট ফোলা
- ঢেকুর বা উদ্গার তোলা
- বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া
- শুয়ে থাকার পর ব্যথা বেড়ে যাওয়া
- পিঠের নিচে, উপরে বা মাঝখানে ব্যথা করা
- বদ হজম বা অম্বল হয়
গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা হলে কমানোর উপায়
গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা হওয়া একটি জটিল সমস্যা। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাবার জন্য নিম্নলিখিত বিধি নিষেধ মেনে চলতে পারেন।
এসিডিটি হয় এমন জাতীয় খাবার না খাওয়া
এসিডিটি সৃষ্টি করে এমন সকল খাবার না খাওয়া। যেমন- অতিরিক্ত তেল যুক্ত খাবার, অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার, রিচ ফুড, ক্যাফেইন, ভাজাপোড়া, চর্বিযুক্ত খাবার এবং অ্যালকোহল ইত্যাদি খাবারগুলো এড়িয়ে চলুন।
মাথা উঁচু রাখুন
আপনি যদি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভোগেন তাহলে মাথা উঁচু করে ঘুমান। কারণ ঘুমালে এসিড খাদ্যনালীতে প্রবাহিত হয়। তাই খাদ্যনালীতে এসিড যাতে প্রবাহিত হতে না পারে সেই জন্য উঁচু বালিশে মাথা রেখে ঘুমান।
স্ট্রেস কমান
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো চিন্তা বা স্ট্রেস। তাই নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্যদিয়ে চিন্তা বা স্ট্রেস কমানোর চেষ্টা করুন।
অল্প পরিমাণে বারে বারে খান
অল্প-অল্প করে খাবার বারে-বারে খান, এতে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম হবে।
নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন
গ্যাস্ট্রিকের কারণে যদি পিঠে ব্যথা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায় তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। ডাক্তারের পরামর্শ মতো নিয়মিত ঔষধ সেবন করুন।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিক কারণে পিঠে ব্যথা দূর করার উপায়
আমাদের আশেপাশে এমন অনেক খাবার আছে যেগুলো খেলে গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা কম হবে। আপনারা ওষুধ না খেয়ে এই খাবারগুলো পরিমাণ মতো নিয়মিত খেলে গ্যাস্ট্রিক কারণে পিঠে ব্যথা দূর হয়ে যাবে বলে আশা করা যায়। ঘরোয়া পদ্ধতিতে গ্যাস্ট্রিকের কারণে পিঠে ব্যথা দূর করার উপায় গুলো হলো-
জিরা
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য জিরা অনেক উপকারী। এক লিটার পানিতে এক চা চামচ জিরা ও এক চা চামচ কাঁচা জোয়ান ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে পানিটি পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হয়ে যাবে। অবশ্যই পানিটি ছেঁকে পান করতে হবে।
দারুচিনি
আপনারা জানলে অবাক হয়ে যাবে- দারুচিনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য বিশেষ কার্যকর। দারুচিনি এসিডিটি ও পেটে ব্যথা দূর করার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। আপনারা চাইলে দারুচিনি গুড়াঁ কফি ওটমিল বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। এছাড়াও দারুচিনি পানির সাথে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন।
পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা হলো একটি প্রাকৃতিক উপাদান। এটি গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য বেশ কার্যকারী। তাই পিঠের ব্যথা দূর করার জন্য পুদিনা পাতা পানির সাথে ফুটিয়ে চায়ের মতো করে খেতে পারেন।
এলোভেরা
এলোভেরাকে বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এটি ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার জন্য বেশি ব্যবহৃত হয়। এলোভেরা পেটে থাকা এসিডের কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয়, একারণে পেটের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
লবঙ্গ
লবঙ্গ হলো এমন একটি কার্যকারি উপাদান যেটি খেলে সাথে সাথে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমতে শুরু করে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য প্রতিদিন ২ - ৪ টা লবঙ্গ কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য কিছু ঔষধের নাম
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার জন্য আমরা অনেক ধরনের ঔষধ সেবন করে থাকি। তাই এখানে কিছু ঔষধের নাম উল্লেখ্য করা হলো-
- সেকলো ২০-(Seclo 20)
- ম্যাক্সপ্রো ২০-(Maxpro 20)
- অপটন ২০-(Opton 20)
- সারজেল ২০-(Sergel 20)
- ফিনিক্স ২০-(Finix 20)
- লোসেকটিল-(Losectil)
- এসিফিক্স ২০-(Acifix 20)
- প্যারিসেল ২০-(Paricel 20)
- পিপিআই ২০-(PPI 20)
- ইসোরাল ২০-(Esoral 20)
- নেক্সাম ২০-(Nexum 20)
- ইসোটিড ২০-(Esotid 20)
- প্রোগাট ২০-(Progut 20)
- ম্যাক্সিমা ২০-(Maxima 20)
সর্বশেষ কথা হলো উপরে লিখিত ওষুধগুলো সেবন করার আগে একজন রেজিস্ট্রেড ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিন।