পাইলস কি? লক্ষণ কি? চিকিৎসা কি? পাইলস এর ছবিসহ বিস্তারিত....

পাইলস এর ছবি
পাইলস এর ছবি
চিত্র: পাইলস এর ছবি
পাইলস কি?
পায়ুপথের একটি জটিল রোগের নাম পাইলস। এটি অর্শ রোগ নামেও পরিচিত। পাইলস হলে মলদারের ভিতর রক্তের শিরা এবং মাংসপিণ্ড ফুলে যায়, ধীরে ধীরে মাংসপিন্ড ঝুলে যায়। ফলে  মলত্যাগ করার সময় মাংশপিন্ডে রক্ত বেড়ে যায় এবং চাপে ফেটে রক্ত বের হয়। খুব দ্রুত পাইলস জটিলরূপ ধারণ করে তাই লক্ষণ দেখা দেয়ামাত্র চিকিঃসা গ্রহণ করতে হবে।
শিশু থেকে বৃদ্ধ যেকোন বয়সেই হতে পারে পাইলস বা অর্শ্ব। পাইলস রোগটি প্রথম অবস্থায় মানুষ গুরত্ব না দেয়ায় অবস্থা গুরুত্বর হয়ে ওঠে। তাই প্রাথমিক অবস্থাতেই পাইলস সনাক্ত করে কিছু নিয়ম ও ঘড়োয়া চিকিৎসাতেই রোগ সারিয়ে তুলা যায়। এই রোগটি হলে মলদ্বারে প্রচন্ড চুলকানি, ব্যাথা ও রক্তপাত হয়, যা খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রনাদায়ক। বিশেষ করে দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীরা পাইলসে আক্রান্ত হতে পারেন। এছাড়া প্রতিদিন অতিরিক্ত চাপ দিয়ে যারা মল ত্যাগ করেন তারাও এই রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারেন। এজন্য আমাদের পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে হবে।

পাইলস এর লক্ষণ

পাইলস এর প্রধান লক্ষণগুলো নিচে দেয়া হয়েছে:
  • মলত্যাগের সময় ব্যাথা অনুভব হবে এবং সময় বেশি লাগবে, এমনটি হলে বুঝবেন এটি পাইলসের প্রাথমিক লক্ষণ। দীর্ঘদিন এমনটি চলতে থাকলে পাইলস দেখা দেবে
  • ক্রমশই মলদ্বারে চুলকানি অনুভব হবে অথবা মলত্যাগের পর মলদ্বারের ভিতর খোচা খোচা অনুভব হবে।
  • স্বাভাবিকভাবে বসতে পারবেননা, সবসময় অস্বস্তি লাগবে।
  • মলের সাথে রক্ত আসবে এবং মলত্যাদে প্রচন্ড কষ্ট হবে, এটি পাইলসের চূড়ান্ত পর্যায়।

পাইলস এর চিকিৎসা

পাইলস এর প্রাথমিক চিকিৎসা:
  • সকল সুস্থ মানুষের পায়ুপথে ৩টি অ্যানাল কুশন থাকে, এগুলো মলদ্বারের মুখ বন্ধ রাখে। পাইলস থাকে মলদ্বারে। অনেক মানুষ মল ত্যাগ করার সময় আতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করেন। এর ফলে স্বাভাবিক ৩টি অ্যানাল কুশনের কোন একটি বা একাধিক লম্বা হয়ে নিচে নেমে আসতে পারে এবং পাইলস রোগের সৃষ্টি করতে পারে। তাই মলত্যাগে অতিরিক্ত চাপ দেয়া যাবেনা। কষা হয়ে থাকলে তার চিকিৎসা নিতে হবে।
  • দীর্ঘ সময় ধরে মল ধরে রাখার ফলে মল ত্যাগে অনেক সমস্যা হয়, মল শক্ত হয়ে যায় এবং নির্গমণের সময় মলদ্বারে অতিরিক্ত ঘর্ষণ সৃষ্টি করে। যারা সকালে দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশি হয়। তাই কোনোভাবেই এই অভ্যাস করা যাবেনা।
  • কোনো ভাবে যদি পাইলসের সমস্যা দেখা দিতে শুরু করে তাহলে নরম থাবার খাবেন যাতে মল নরম হয় এবং ঘরোয়া চিকিৎসা অবলম্বণ করবেন তাহলে প্রাথমিক পর্যায়েই পাইলসের সমস্যা থামাতে পারবেন।

পাইলস এর ঘরোয়া চিকিৎসা
  • একটি পরিষ্কার কাপড়ে কয়েক টুকরা বরফ নিয়ে মলদ্বারে ১০ মিনিট লাগাবেন। এতে ব্যাথা কমে যাবে এবং রক্ত চলাচল বাড়বে। দিনে ৩ বার এভাবে বরফ লাগাবেনে এতে পাইলসের ব্যথা দ্রুত সারবে।
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একগ্লাস পানিতে ১ চা চামচ (৫ মিলি) পরিমাণে আপেল সিডার ভিনেগার মিশিয়ে পান করবেন।
  • একটুকরো তুলোতে আপেল সিডার ভিনেগার লাগিয়ে মলদ্বারের ব্যথার স্থানে আলোতভাবে লাগিয়ে নিন, কিছুক্ষণ জ্বালাপোড়া করলেও এটি পাইলস সমস্যায় বেশ উপকার দেয়।
  • অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ফল খাবেন। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাইলস ঠিক করতে খুবি কার্যকরী। যেমন জাম, আনারাস খেজুর ইত্যাদি। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে পড়ুন... এন্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা
  • পরিমিত পানি পান করতে হবে, কারণ পানিশূন্যতার কারণেও পাইলস হতে পারে। এছাড়া লেবু, আদাকুঁচি ও মধু মিশিয়ে দিনে ২/৩ বার খেলে পাইলস দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আসে।
  • রতিদিন এক চা চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খাদ্য তালিকায় রাখবেন, বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া গিয়েছে, এই তেল শরীরে প্রদাহ দ্রুত কমায় এবং অর্শ্ব বা পাইলস নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী।
ঘড়োয়া চিকিৎসায় যদি পাইলস নিয়ন্ত্রণে না আসে তাহলে দ্রুত ডাক্তারের নিকট জাবেন। অবস্থা বুঝে তাক্তার চিকিৎসা করে থাকে। অবস্থা বেশি গুরুতর হয়ে গেলে অপারেশন করা লাগতে পারে। অপারেশন এর বিষয়ে বিস্তারিত দেখে নিন... কিভাবে বুঝবেন অপারেশন করতে হবে? পাইলস অপারেশন খরচ কত?


পাইলস এর ব্যাথা কমানোর ঔষধ
  • পাইলসের ব্যাথা কমানোর জন্য একটুকরা কাপড়ে বরফ নিয়ে ১০ মিনিট লাগিয়ে রাখবেন। ব্যাথা কমে যাবে।
  • মলদ্বারের বাহিরের আক্রান্ত স্থানে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে ম্যাসাজ করলে দ্রুত ব্যাথা কমে আসবে।
  • অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার একটুকরো তুলোতে ২/৩ ফোঁটা লাগিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগাবেন এতে কিছুক্ষণ জ্বালাপুড়া করার পর ব্যাথ্যা কমে যাবে।
  • নরমাল প্রারাসিটামল ট্যাবলেট খেতে পারেন। ব্যাথা খুবি মারাত্মক হলে এবং কোনো ঘরোয়া চিকিৎসায় ফল না পেলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক নিতে হতে পারে।

সাবধানতা:

পায়ুপথে অনেক ধরণের রোগ হয়ে থাকে। কিন্তু সাধারণ মানুষ পায়ুপথের যেকোনো রোগকেই পাইলস মনে করে ভুল করেন। অনেকে লজ্বায় প্রকাশ করেননা। সঠিক চিকিৎসার অভাবে সমস্যা গুরুত্বর থেকে গুরুত্বর হয়ে ওঠে। সমস্যা বুঝে সঠিক চিকিৎসা নিলে কোনো প্রকার অস্ত্রোপচার বা অপারেশন ছাড়াই পাইলস ভালো করা সম্ভব।

পায়ু পথে ফিস্টুলা, ফিসার, ফোড়া, হেমোরয়েড, টিউমার ইত্যাদি রোগ হয়ে থাকে তাই লক্ষণ বুঝে ঘড়োয়া চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, লক্ষণ যদি বুঝতে না পারেন তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে লজ্জ্বা করবেননা। সামান্য একটু সতর্কতা দিতে পারে জীবণের নিরাপত্তা।


Next Post


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url