এলার্জি চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম ও ঘরোয়া উপায়

বর্তমানে কম বেশি সকলের এই এলার্জির সমস্যা আছে। আর এদের মধ্যে থেকে যাদের এলার্জি সমস্যা বেশি তাদের খুব সাবধানে থাকতে হয়। কেননা সামন্য এদিক থেকে ওদিক হলে শুরু হয়ে যায় চুলকানি, চোখ লাল, ত্বকে লালচে দানা ওঠা, হাঁচি, কাশি, নাক দিয়ে পানি পড়া, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি। এই সমস্যাগুলো মধ্যে থেকে আজ আমরা এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানি দূর করার ঔষধের নাম নিয়ে আলোচনা করবো। তাই যারা এলার্জি চুলকানি ঔষধের নাম জানতে চান তারা এই আর্টিকেলটি ভালোভাবে পড়ুন।
এলার্জি চুলকানি ঔষধের নাম
- Rupatadine 10 mg (রুপাটাডিন): এলার্জির চুলকানি দূর করার জন্য রুপাটাডিন ওষুধটি খেতে পারেন। এই ওষুধটি দিনে ১ বার খেতে পারেন। তবে ওষুধটি রাতের বেলা খেতে হবে।
- Cetirizine 10 mg (সেট্রিজিন): সেট্রিজিন ওষুধটি এলার্জির চুলকানি দূর করতে অত্যন্ত কার্যকারী। এই ওষুধটি দিনে ১ বার খেতে পারেন। তবে ওষুধটি রাতের বেলা খেতে হবে।
- Chlorpheniramine 4 mg (ক্লোরফেনিরামিন): যদি এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে চান তাহলে ক্লোরফেনিরামিন খেতে পারেন। এই ওষুধটি দিনে তিন বার খেতে পারেন।
- Fexofenadine 60 mg, 120 mg, 180 mg (ফেক্সোফেনাডিন): এলার্জি দূর করতে ফেক্সোফেনাডিন ওষুধটি অত্যন্ত কার্যকারী। এই ওষুধটি যদি 120 mg বা 180 mg হয় তাহলে দিনে ১ বার খেতে পারেন। আর যদি ওষুধটি 60 mg হয় তাহলে দিনে ২ বার খেতে পারেন।
- Loratadine 10 mg (লোরাটাডিন): এলার্জির চুলকানি দূর করার জন্য লোরাটাডিন ওষুধটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ওষুধটি দিনে ১ বার খেতে পারেন।
উপরোক্ত ঔষধগুলো গ্রহণ করার আগে একজন রেজিস্টার ডাক্তার সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। কেননা সকলের এলার্জির চুলকানি একেই কারণে হয় না। তাই এলার্জির সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ ঔষধ গ্রহণ করা উচিত।
এলার্জির প্রকারভেদ
এলার্জি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-
- স্কিন এলার্জি,
- ল্যাটেক্স এলার্জি,
- ফুড বা খাদ্য এলার্জি,
- ডাস্ট এলার্জি
- ঠান্ডা জনিত এলার্জি
- পৌষ্য এলার্জি সহ আরো বিভিন্ন ধরনের এলার্জি দেখা দেয়।
স্কিন এলার্জি
ল্যাটেক্স এলার্জি
ল্যাটেক্স এলার্জি শব্দটি শুনে সবাই অবাক হচ্ছেন। অবাক হওয়ার কিছু নেই ল্যাটেক্স শব্দটি অর্থ জানলেই সবাই বুঝতে পারবেন এটি কোন ধরনের এলার্জি। ল্যাটেক্স শব্দটি এসেছে ব্রাজিল থেকে যার অর্থ হলো রাবার গাছের রস। অর্থাৎ রাবার গাছের রস দিয়ে তৈরি করা জিনিস যেমন- রাবার ব্যান্ড, গ্লাভস, রাবার বল, বেলুন ইত্যাদি থেকে দেখা দেয়।
রাবার গাছের রস দিয়ে তৈরি করা জিনিসের সংস্পশে গেলে উক্ত স্থানে চুলকানি হয় বা ফুলে ওঠে। এছাড়াও ল্যাটেক্স এলার্জি মারাত্মক আঘাত আনলে শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালাপোড়া করা, নাক দিয়ে পানি পড়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
ফুড এলার্জি
খাবারের প্রতি অস্বাভাবিক প্রতিরোধ ক্ষমতাকে ফুড এলার্জি বলে। ফুড এলার্জির লক্ষণগুলো হালকা থেকে গুরুতর হতে পারে। এর মধ্যে আছে চুলকানি, শ্বাসকষ্ট, আমবাত, জিহ্বা ফুলে ওঠা, ডায়রিয়া, বমি ও নিম্ন রক্তচাপ ইত্যাদি।
ফুড এলার্জি হতে পারে বিভিন্ন ধরনের খাবার থেকে। যেমন- গরুর মাংস, চিনা বাদাম, ডিম, চিংড়ি মাছ, শেলফিস, ইলিশ মাছ ইত্যাদি।
ডাস্ট এলার্জি
বাতাসে যে ধুলোবালি, ফুলের রেণু, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, বিভিন্ন ধরনের ধোঁয়া, কেমিক্যাল থাকে এগুলোকে ডাস্ট বলে। এই ডাস্টগুলো যখন নাকের এবং চোখের সংস্পশে আসে তখন এলার্জির রিঅ্যাকশন হয়। আর তখন নাক দিয়ে পানি পড়া, হাঁচি, কাশি, সার্দি, শ্বাসকষ্ট, বুকে চাপ লাগা, চুলকানি হওয়া, চোখ লাল হয়ে যাওয়া, ত্বকে র্যাশ বেড়ানোর মতো লক্ষণগুলো দেখা দেয়।
কোল্ড এলার্জি
পৌষ্য এলার্জি
কম বেশি সকলেই বসতবাড়িতে বিড়াল ও কুকুর পালন করে। এদের মধ্যে অনেকেই মনে করে এই পোষা প্রাণীদের লোম থেকে এলার্জি দেখা দেয়া। এই ধারণাটি কিন্তু একদম ঠিক নয়। পোষা প্রাণীদের লোমে কোন এলার্জি থাকে না। এলার্জি থাকে পোষা প্রাণীদের লোমে আটকে থাকা ধূলোবালি, পোষা প্রাণীর লালা, মলমত্র ইত্যাদি। পৌষ্য এলার্জি হলে শ্বাসকষ্ট ও হাঁচি দেখা দেয়।
এলার্জি চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
আপেল সিডার ভিনেগার
আপেল সিডার ভিনাগার শুধু ওজন হ্রাস ও হজমজনিত সমস্যা দূর করতে ব্যবহার করা হয় না। তার পাশাপাশি এটি ত্বকেও ব্যবহার করা হয়। এতে অ্যাসিটিক অ্যাসিড রয়েছে, যা ত্বকের এলার্জি ও চুলকানির প্রভাব কমিয়ে দেয়। তবে এটি সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার না করাই ভালো।
১ কাপ গরম পানি সাথে ১ চা চামচ আপেল সিডার ভিনাগার মিশিয়ে তুলা দিয়ে চুলাকানো স্থান লাগান। এভাবে দিনে ২ বার করে লাগালে এলার্জি দূর হয়ে যাবে।
অ্যালোভেরা জেল
প্রথমে একটি অ্যালোভেরার পাতা কেটে রস বের করে নিন। এরপর এই রস এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানিতে লাগিয়ে নিন। যদি অ্যালোভেরা গাছ না থাকে তাহলে অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতে পারেন। এটি লাগিয়ে ৩০-৪০ মিনিট রাখে দিলে দেখবেন চুলকানি দূর হয়ে গেছে।
নারকেল তেল
ত্বকের যন্ত্র সবচেয়ে ভালো উপাদান হলো নারকেল তেল। এতে ময়েশ্চারাইজিং রয়েছে, যা এলার্জি ত্বকে সুরক্ষা দেয়। এছাড়াও এটি চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে।
প্রথমে পরিমাণ মতো নারকেল তেল নিয়ে ৫ সেকেন্ড গরম করে নিন। এরপর যেখানে এলার্জির কারণে চুলকানি হচ্ছে সেখানে লাগিয়ে নিন। লাগানো ১ ঘণ্টা পরে চাইলে ধুয়ে ফেলতে পারেন। এভাবে ৩-৪ ঘণ্টা পর পর চুলকানি স্থানে লাগাতে পারেন।
বেকিং সোডা
ত্বকের এলার্জি থেকে মুক্তি পেতে বেকিং সোডা ব্যবহার করতে পারেন। এটি এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানি দূর করতে সাহায্য করে।
১ চা চামচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য পরিমাণে পানি নিয়ে একটি মসৃণ পেষ্ট তৈরি করে নিন। এরপর পেষ্টটি চুলকানির স্থানে লাগিয়ে ১০ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে দিনে ৩-৪ বার ব্যবহার করলে এলার্জি দূর হয়ে যাবে।
ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল
এলার্জির চুলকানি থেকে মুক্তি পেতে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করতে পারেন। কেননা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলে থাকা ওষুধি গুণ এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানি দূর করে দেয়।
প্রথমে গোসলের পানিতে কয়েক ফোঁটা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে নিন। এরপর এই পানি দিয়ে গোসল করে ফেলুন। তার পাশাপাশি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েলের ভাপ নিন। এভাবে ব্যবহার করলে এলার্জির কারণে হওয়া চুলকানি দূর হয়ে যাবে।