মানুষের সৌন্দর্য্য মূল চাবিকাঠি হলো দাগ মুক্ত ত্বক। কিন্তু তা অসম্ভব হয়ে পরে মুখের বিভিন্ন ধরনের দাগের কারণে। কেননা ত্বকে দাগ হওয়ার কারণে মুখের সৌন্দর্য ও উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়। তাই সকলে মুখের দাগ দূর করার জন্য কোন ক্রিম ব্যবহার করবেন তা নিয়ে দুচিন্তায় পরে যায়। তাহলে চলুন এই আর্টিকেল থেকে মুখের দাগ দূর করার ক্রিম সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
মুখের দাগ কেন হয়
সবাই মুখের দাগ দূর করার ক্রিম ও উপায় সম্পর্কে জানতে চাই। কিন্তু মুখের দাগ দূর করার আগে জানতে হবে মুখে দাগ কেন হচ্ছে। মুখে দাগ হওয়ার সাধারণ কারণগুলো হলো:
সূর্যের ক্ষতিকর অতি বেগুনী রশ্মির কারণে ত্বকে কালচে বিন্দু বা ছোপ ছোপ দাগ দেখা দেয়। এর প্রধান কারণ হলো হাইপারপিগমেন্টেশন। এছাড়াও একজিমা, ব্রণ, চিকেনপক্সের, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা ও এলার্জিসহ বিভিন্ন কারণে ত্বকে দাগ সৃষ্টি হতে পারে।
মুখের দাগ দূর করার ক্রিম
মুখের দাগ দূর করার জন্য সবচেয়ে ভালো ক্রিম কোনটি তা বলা সম্বভ নয়। তবে মুখের দাগ দূর করার জন্য বাজারে বিভিন্ন ধরনের ক্রিম পাওয়া যায়। তার মধ্যে থেকে কয়েকটি ক্রিমের নাম নিচে তুলে ধরা হলো-
রেটিনল ক্রিম
ত্বকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সামধান করতে রেটিনল ক্রিমটি বেশ কার্যকারী। এই ক্রিমটি মুখের কালো দাগ, ব্রণ ও ত্বকের ডেড সেল দূর করে নতুন সেল তৈরি করতে সাহায্য করে। সেই সাথে কোলাজেন উপাদান বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে ত্বক থাকে টানটান। এছাড়াও এই ক্রিমটি বয়সের ছাপ পড়া থেকে ত্বককে রক্ষা করে।
ভিটামিন সি ক্রিম
ভিটমিন সি ক্রিমটি সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযোগী। এই ক্রিমটি ত্বকের বিবর্ণতা, ব্রণ এবং ব্রণের কারণে হওয়া দাগ দূর করে ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল ও মসৃণ। এছাড়াও ত্বকের পোরস কমিয়ে ত্বকে করে তোলে আকর্ষণীয়। ব্লিচিং করার কারণে ত্বকে ইনফেকশন হলো তা নিরাময় করে ত্বকে করে তোলে সুস্থ।
কোজিক অ্যাসিড ফেস ক্রিম
কোজিক অ্যাসিড ফেস ক্রিমটি ত্বকের ছোপ ছোপ দাগ, রোদে পোড়া দাগ, বয়সের ছাপ, ব্রণ এবং ব্রণের দাগ দূর করে ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল। এছাড়াও ডীপ ক্লিন করে ত্বকের ভিতরে থেকে ময়লা বের করে ফেলে।
দ্যা অর্ডিনারি এএইচএ
এই ক্রিমটি ত্বকের ব্ল্যাক হেডস, হোয়াইট হেডস, ব্রণ ও ব্রণের দাগ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে তোলে। এছাড়াও এই ক্রিমটি ত্বককে ভিতরে থেকে ক্লিন করে।
আলফা-আরবুটিন ক্রিম
আলফা আরবুটিন এবং গ্লুটাথিয়নের মতো শক্তিশালী উপাদান দিয়ে তৈরি, এই ক্রিমটি সময়ের সাথে সাথে কালো দাগ এবং অমসৃণ ত্বকের টোনকে বিবর্ণ করে ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল।
লোটাস হোয়াইট গ্লো পিঙ্ক নাইট ক্রিম
লোটাস হোয়াইট গ্লো পিঙ্ক নাইট ক্রিমটি ত্বকের কালো দাগ দূর করে ত্বক করে তোলে উজ্জ্বল। এছাড়াও ক্ষতিকর ত্বককে ভিতর থেকে সারিয়ে ত্বকের লাবণ্যতা বাড়ায় এবং ত্বকে আর্দ্রতা ধরে রাখে।
মাইল্ড এন্ড মাইন্ড জিনসেং এন্ড রাবিশ ক্রিম
মাইল্ড এন্ড মাইন্ড জিনসেং এন্ড রাবিশ ক্রিমটি ত্বকের জন্য অনেক উপকারী। এটি ত্বক সকল প্রকার দাগ, ব্রণ, ত্বকের গর্ত ও তেলতেলে ভাব দূর করে ত্বককে লাবণ্যতা বাড়ায়। এছাড়াও ক্ষতিকর ত্বককে ভিতর থেকে সারিয়ে ত্বকের লাবণ্যতা ফিরিয়ে আনে।
মুখের দাগ দূর করার ফেসওয়াস
মুখে বিভিন্ন প্রকারের দাগ দেখা যায়। এই দাগ সৃষ্টি হতে পারে ব্রণ, ধুলাবলি ও রোদের কারণে। তবে এটি দূর করা কোনো কঠিন ব্যাপার নয়। কেননা বর্তমানে বিভিন্ন প্রকারের ফেসওয়াস পাওয়া যায়। যেগুলো মুখের দাগ দূর করে ত্বক করে তুলে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
Star Sunscreen Facewash (ষ্টার সানস্ক্রিন ফেসওয়াশ)
মুখের তৈলাক্ত ভাব দূর করে ত্বক উজ্জ্বল বৃদ্ধি করতে ষ্টার সানস্ক্রিন ফেসওয়াশটি ব্যবহার করতে পারেন। এই ফেসওয়াশটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর হয়ে যাবে। এছাড়াও মুখে যদি দীর্ঘদিনের পুরানো দাগ থাকে তাহলে এই ফেসওয়াশটি ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। এই ফেসওয়াশটি দিয়ে শুধু দিনে নয় রাতেও ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করবেন।
Breylee Brand Facewash (ব্রেইলি ব্র্যান্ডের ফেসওয়াশ)
পক্সের দাগ, কালো গুটি দাগ সহ বিভিন্ন ধরনের দাগ দূর করার জন্য এই ফেসওয়াশটি অনেক জনপ্রিয়। এই ফেসওয়াটি যদি নিয়তিম ব্যবহার করেন তাহলে কিছু দিন মধ্যে মুখের সকল প্রকারের দাগ দূর হয়ে যাবে। যার ফলে ত্বক হয়ে ওঠবে উজ্জ্বল ও মসৃণ।
DNX Facewash (ডিএনএক্স ফেসওয়াশ)
শ্যামলা বর্ণের মানুয়ের জন্য ডিএনএক্স ফেসওয়াশটি অনেক উপকারি। এই ফেসওয়াশটি নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে বলিরেখা দূর হয়ে যাবে এবং ত্বকে উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তাদের জন্য অনেক কার্যকারী।
রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মিত এই ফেসওয়াশটি দিয়ে মুখ ধুলে ত্বকের বিভিন্ন ধরনের দাগ নিমিষেই দূর হয়ে যাবে। তাই যাদের মুখ দাগ দূর করতে চান তাহলে এই ফেসওয়াশটি ব্যবহার করুন।
Anti-Acne Neem Facewash
মুখের কালো দাগ দূর করার জন্য এই ফেসওয়াশটি অত্যন্ত কার্যকারী। এই ফেসওয়াশটি ত্বকে ময়লা অপসারণ করে ত্বক করে তুলে পরিষ্কার ও উজ্জ্বল। এছাড়াও ত্বকের তেল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে, জীবাণুর বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং ব্রণের উপদ্রব কমায়। তাই স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য এই ফেসওয়াশটি দিনে দুই বার ব্যবহার করুন।
মুখের দাগ দূর করার ঘরোয়া উপায়
মুখের দাগ দূর করার ৬টি ঘরোয়া উপায় নিচে দেওয়া হলো:
আলু
প্রথম একটি আলু পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন। এরপর আলুটি মোটা মোটা করে টুকরো করে নিন। এবার টুকরো করা আলুগুলো হালকা ভেজা মুখে চক্রাকারে ঘষতে থাকুন। এভাবে দিন দুইবার করে এক মাস ব্যবহার করলে মুখের দাগছোপ দূর হয়ে যাবে। কেননা আলুতে ক্যাটকোলেজ নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে, যা রোদে পোড়াভাব দূর করে ত্বক করে তুলে উজ্জ্বল। আরো ভালো ফলাফল পেতে মাঝে মধ্যে আলুর সাথে লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
কমলালেবুর খোসা
কমাললেবুর খোসা সরাসরি ব্লেন্ড করে নিন অথবা শুকিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর ব্লেন্ড করা কমলালেবুর খোসা মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছু দিন ব্যবহার করলে দাগছোপ দূর হয়ে মুখ হয়ে ওঠবে কোমল ও উজ্জ্বল। কেননা কমলালেবুতে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে। আর ভিটামিন সি মুখের দাগছোপ দূর করতে সহায়তা করে। তবে মাঝে মধ্যে কমলালেবুর খোসার সাথে লেবুর রস, মধু ও দুধ মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
চন্দন
অনেক সময় ব্রণ দূর হয়ে গেলেও মুখে দাগ থেকে যায়। সঠিক সময় দাগ দূর করার ব্যবস্থা না নিলে দাগ স্থায়ী হয়ে যেতে পারে। তাই ব্রণের দাগ দূর করার জন্য চন্দনের গুড়ো ব্যবহার করতে পারেন। প্রথমে ২ চা চামচ চন্দনের গুড়ো নিয়ে তার সাথে পরিমাণ মতো গোলাপজল মিশিয়ে একটি ঘন পেষ্ট তৈরি করে নিন। তৈরি করা পেষ্টটি মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করুন। এরপর শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই মিশ্রণটি সপ্তাহে একবার বা দুইবারের বেশি ব্যবহার করা উচিত নয়।
পাতিলেবুর রস
লেবুর রসে পরিষ্কার তুলা ভিজিয়ে সরাসরি মুখের দাগে লাগিয়ে নিন। তবে ত্বক যদি সেনসিটিভ হয় তাহলে পানি অথবা মধু মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। মুখে লাগানোর ১০-২০ মিনিট পরে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছু দিন ব্যবহার করলে মুখের দাগ দূর হয়ে যাবে। কেননা পাতিলেবুতে ভিটামিন সি ও সাইট্রিক অ্যাসিড রয়েছে, যা মুখের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
টমেটোর রস
টমেটোর রস মুখের কালো দাগ দূর করতে বেশ কার্যকরী। তাই মুখে দাগ দূর করার জন্য একটি টমেটো কেটে মুখে হালকাভাবে ঘষুন। এরপর শুকিয়ে যাওয়ার জন্য ১০-২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মুলতানি মাটি ও গোলাপজল
পরিমাণ মতো মুলতানি মাটি ও গোলাপজল নিয়ে একটি ফেসপ্যাক তৈরি করে নিন। এরপর তৈরি করা ফেসপ্যাকটি মুখে ম্যাসাজ করে ৩০ মিনিট শুকানোর জন্য রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এভাবে কিছু দিন ব্যবহার করলে ফলাফল নিজেই দেখতে পাবেন।