বিসিজি টিকার দাগ না হলে করনীয়

বিসিজি টিকার দাগ না হলে করনীয়

বিসিজি টিকা হলো শিশুদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ টিকা। এটি টিউবারকুলোসিস (টি বি) রোগ থেকে রক্ষা করে। বিসিজি টিকা দেওয়ার পর শরীরে একটি দাগ দেখা দেয়। তবে অনেক সময় কিছু বাচ্চার দাগ তৈরি হয় না। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করবো, বিসিজি টিকার দাগ না হলে করনীয় সম্পর্কে।


বিসিজি টিকা সম্পর্কে পরিচিতি

বিসিজি টিকা প্রথমবারের মতো ১৯২১ সালে তৈরি হয়। এটি টিউবারকুলোসিস বা টি বি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। টিকা দেওয়ার পর কিছুদিনের মধ্যে একটি দাগ তৈরি হয়। এই দাগ শরীরে রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার প্রমাণ।


বিসিজি টিকার দাগ কেমন হয়?

বিসিজি টিকার দাগ সাধারণত ৫ থেকে ১০ মিমি বড় হয়। এটি প্রথমে লাল হয় এবং ধীরে ধীরে শুকিয়ে যায়। দাগটি তখন ফেটে যায় এবং কিছুক্ষণ পর সাদা হয়ে যায়। পরে এটি স্বাভাবিক রঙে ফিরে আসে।


দাগ না হলে কি সমস্যা?

বিসিজি টিকার দাগ না হলে অনেক বাবা-মা চিন্তা করেন। তাদের মনে হয়, তাদের সন্তানটি টিকা গ্রহণ করেনি। তবে দাগ না হওয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে:

১. শরীরের প্রতিক্রিয়া: কিছু বাচ্চার শরীর টিকার প্রতি আলাদা প্রতিক্রিয়া দেখায়।

২. টিকার গুণগত মান: কখনও কখনও টিকা দেওয়ার সময় ব্যবহৃত স্যালাইন বা অন্যান্য উপাদানের কারণে দাগ তৈরি না হতে পারে।

৩. টিকার স্থল: যদি টিকা দেওয়ার জায়গা পরিষ্কার না থাকে, তবে দাগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।


বিসিজি টিকার দাগ না হলে করণীয়

বিসিজি টিকার দাগ না হলে কী করতে হবে তা নিচে আলোচনা করা হলো:

১. চিন্তা করবেন না

প্রথমে চিন্তা করবেন না। অনেক সময় দাগ না হলেও বাচ্চার শরীরে টিকা কার্যকর থাকে।

২. শিশুর স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল রাখুন

বাচ্চার স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিন। যদি সে সুস্থ থাকে, খেতে পারে, খেলতে পারে এবং স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠছে, তাহলে চিন্তার কিছু নেই।

৩. ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন

যদি বিসিজি টিকার দাগ না হয়, তাহলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন। ডাক্তার পরীক্ষা করে নিশ্চিত করবেন যে টিকা কার্যকর হয়েছে কিনা।

৪. চিকিৎসকের পরামর্শ নিন

ডাক্তার যদি মনে করেন, দাগ না হওয়ার কারণ খুঁজে বের করা দরকার, তাহলে তারা কিছু পরীক্ষার পরামর্শ দিতে পারেন।

৫. ভ্যাকসিনেশন রেকর্ড দেখুন

টিকা নেওয়ার সময় যে রেকর্ড দেওয়া হয়, সেটি দেখুন। এতে টিকার তথ্য লেখা থাকে। যদি সেখানে বিসিজি টিকার তথ্য থাকে, তাহলে বুঝবেন টিকা নেওয়া হয়েছে।


বিসিজি টিকার গুরুত্ব

বিসিজি টিকা শিশুদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এটি টিউবারকুলোসিস (টি বি) রোগ থেকে রক্ষা করে। এই রোগটি ফুসফুসে আক্রান্ত করে এবং মারাত্মক হতে পারে।


টিউবারকুলোসিস রোগের লক্ষণ

টি বি রোগের কিছু লক্ষণ হলো:

  1. দীর্ঘস্থায়ী কাশি।
  2. রক্তাক্ত কাশি।
  3. শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া।
  4. রাতের বেলা ঘামে ভিজে যাওয়া।
  5. ক্ষুধামন্দা এবং ওজন কমে যাওয়া।

যদি এসব লক্ষণ দেখা দেয়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান।


বিসিজি টিকা দেওয়ার পর করণীয়

১. বিশ্রাম দিন

টিকা দেওয়ার পর শিশুকে বিশ্রাম দিতে হবে। এটি শরীরকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে।

২. স্বাস্থ্যকর খাবার দিন

শিশুকে পুষ্টিকর খাবার দিন। ফল, সবজি, দুধ, এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৩. কর্মক্ষমতা বাড়ান

বাচ্চাকে খেলাধুলা করতে দিন। এটি তাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

৪. পানি পান করানো

শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করান। এটি শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখতে সাহায্য করে।

৫. ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন

ডাক্তার যদি কোনো বিশেষ নির্দেশনা দেন, তাহলে তা মেনে চলুন।


টিকা দেওয়ার আগে কি প্রস্তুতি প্রয়োজন?

বিসিজি টিকা দেওয়ার আগে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে:

১. বাচ্চার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুন

টিকা দেওয়ার আগে শিশুর স্বাস্থ্যের অবস্থা পরীক্ষা করুন। যদি শিশুর জ্বর বা অন্য কোনো অসুস্থতা থাকে, তাহলে টিকা না দেওয়া ভালো।

২. বাচ্চাকে প্রস্তুত করুন

টিকা দেওয়ার সময় বাচ্চাকে শান্ত রাখুন। তাদের সাথে কিছু খেলনা বা গল্প বলুন। এটি তাদের মনোযোগ ভিন্ন দিকে সরিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

৩. ডাক্তারের সাথে কথা বলুন

ডাক্তার যদি টিকার আগে কিছু প্রশ্ন করেন, তবে তাদের সাথে কথা বলুন।

৪. টিকার সময়সূচি মনে রাখুন

টিকার সময়সূচি মনে রাখুন। প্রতিটি টিকার জন্য নির্ধারিত সময় আছে।


টিকার পর দাগ হলে কি করণীয়

যদি বিসিজি টিকার পর দাগ তৈরি হয়, তাহলে কিছু করণীয় আছে:

১. পরিষ্কার রাখুন

দাগটি যদি শুকিয়ে যায়, তাহলে তা পরিষ্কার রাখতে হবে।

২. অতিরিক্ত হাত দেওয়ার প্রয়োজন নেই

দাগের উপর হাত দিতে যাবেন না। এটি সংক্রমণের কারণ হতে পারে।

৩. ডাক্তারকে দেখান

যদি দাগ বড় হয় বা অস্বস্তি অনুভব করেন, তাহলে ডাক্তারকে দেখানো উচিত।

৪. স্বাভাবিক জীবনযাপন করুন

শিশুকে স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে দিন। এটি তাদের মনোবল বাড়ায়।


দাগের বিকল্প সমাধান

কিছু ক্ষেত্রে, দাগ না হওয়ার কারণে বাচ্চাকে পুনরায় টিকার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিতে পারেন। তবে এই বিষয়টি শুধুমাত্র ডাক্তারই নির্ধারণ করবেন।


বিসিজি টিকার অভাবজনিত সমস্যা

কিছু দেশে বিসিজি টিকার অভাব দেখা দিতে পারে। এই কারণে কিছু বাচ্চা টিকা গ্রহণ করতে পারে না।

১. চিকিৎসা সুবিধার অভাব: কিছু জায়গায় স্বাস্থ্যসেবা সঠিকভাবে পৌঁছায় না। ফলে টিকার অভাব হয়।

২. অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে: অনেক বাবা-মা অর্থনৈতিক সমস্যার কারণে শিশুকে টিকা দিতে পারেন না।

৩. অবহেলা: অনেক বাবা-মা টিকার গুরুত্ব সম্পর্কে জানেন না। ফলে তারা শিশুদের টিকা দিতে ভুলে যান।


উপসংহার

বিসিজি টিকা শিশুদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি টিউবারকুলোসিস (টি বি) রোগ থেকে রক্ষা করে। টিকা দেওয়ার পর দাগ না হলে চিন্তার কিছু নেই। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং ডাক্তারকে দেখানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর সুস্থতার জন্য সবসময় সচেতন থাকা প্রয়োজন। বিসিজি টিকা শিশুদের ভবিষ্যতের সুরক্ষা দেয়, তাই এটি গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

আপনার সন্তানের টিকার জন্য সর্বদা যত্নবান হন এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিন। যদি বিসিজি টিকার দাগ না হয়, তাহলে বাবা-মা হিসেবে আপনার দায়িত্ব হলো সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা। শিশুর সুস্থতা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url