রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা

আজকাল সবাই তরকারির স্বাদ বাড়ানোর জন্য মসলা হিসেবে রসুন ব্যবহার করে থাকে। তবে প্রাচীনকালের মানুষ রসুন ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করতেন। কেননা এতে এমন কিছু উপাদান যেমন- নায়াসিন (ভিটামিন বি৩), প্যান্টোথ্যানিক অ্যাসিড (ভিটামিন বি৫), সালফার কম্পাউন্ড, রিবোফ্লাবিন (ভিটামিন বি২), থায়ামিন (ভিটামিন বি১), ভিটামিন বি৬, ফোলেট (ভিটামিন বি৯) ও সেলেনিয়াম ইত্যাদি রয়েছে যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে এই উপাদানগুলোর পাশাপাশি এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাহলে চলুন এই আর্টিকেল থেকে রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা দুয়েই জেনে নেওয়া যাক।

রসুনের উপকারিতা

রসুন খাওয়ার উপকারিতা নিম্নরূপ:
  • রসুনের মধ্যে অ্যালিসিন নামক এক ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে, যা শরীরের রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে।
  • রসুন অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ইউরিনের ইনফেকশন কমাতে সাহায্য করে।
  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • রসুনের মধ্যে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টিফাংগালের গুণাগুণ রয়েছে, যা শরীরকে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
  • হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তি বাড়িয়ে তোলে।
  • রসুনের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো সেলেনিয়াম ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করে ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে।
  • শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল বা এলডিএল কমিয়ে এইচডিএল বা ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • ওজন কমাতে কার্যকারী ভূমিকা পালন করে।
  • রসুনে থাকা উপাদানগুলো ফার্টিলিটির সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে।
  • টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধি করে এবং শুক্রাণুর কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে।
  • মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে তোলে।
  • রসুনে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সেল ড্যামেজ বা কোষের ক্ষতিরোধ করে।
  • ব্রেনের কোষ ড্যামেজ রোধ করে ডিমেনশিয়ার এবং আলঝেইমারস মতো রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • রসুন রক্ত সঞ্চালন ক্ষমতা বাড়ায়।

রসুনের অপকারিতা

রসুন শরীরের জন্য অনেক উপকারি একটি উপাদান। তবে ভুলভাবে রসুন খেলে নানা রকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এতে উপকারেই পরিবর্তে অপকারিতা দেখা দেয়। তাই আমাদের জেনে রাখা উচিৎ কোন কোন ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের গবেষণায় জানা গেছে, ভাজা রসুন খালি পেটে খেলে বমি বমিভাব, বমি ও বুক জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • খালি পেটে রসুন খাওয়ার কারণে ডায়রিয়া হতে পারে। কেননা এতে সালফার রয়েছে, যা পেটে গ্যাস সৃষ্টি করে এবং ডায়রিয়ার দেখা দেয়।
  • রসুন রক্তের ঘনত্ব কমায়। তাই যারা অ্যাসপিরিন, ওয়ারফারিন ইত্যাদি ব্লাড থিনার ওষুধ গ্রহণ করছেন তাদের অতিরিক্ত পরিমাণে রসুন খাওয়া একদম উচিত নয়। কেননা এতে করে রক্ত অতিরিক্ত পাতলা হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
  • বেশি পরিমাণে রসুন খেলে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। যার ফলে নিম্ন রক্তচাপের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
  • হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, রসুনে এমন কিছু উপাদান আছে যার কারণে গ্যাস্ট্রোইসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ বা জিইআরডি হতে পারে। গ্যাস্ট্রোয়েসোফাজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজিজ কে চলিত ভাষায় চোঁয়া ঢেকুর, টক ঢেকুর বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলা হয়ে থাকে।
  • রসুন অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে। এর মূল কারণ হলো রসুনে থাকা সালফার।
  • গর্ভবস্থায় রসুন খাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। কেননা রসুনে থাকা উপাদানগুলো প্রসব বেদনা বা লেইবার পেইন বাড়িয়ে দিতে পারে। এছাড়াও যারা শিশুকে বুকের দুধ পান করান, তাদের রসুন খাওয়া থেকে দূরে থাকা উচিত। কেননা রসুন দুধের স্বাদ বদলে দেয়।
  • বেশি পরিমাণে রসুন খাওয়ার ফলে ‘হাইফিমা’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ কর্নিয়া ও আইরিসের মধ্যে রক্তক্ষরণ হতে পারে। এতে দৃষ্টিশক্তি চলে যেতে পারে।
  • গবেষণায় জানা গেছে, অতিরিক্ত মাত্রায় রসুন খাওয়ার ফলে রসুনে থাকা উপাদান অ্যালিসিন যকৃত বা লিভারে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url