রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি সমস্যা হয় এবং করণীয় কি

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি কি সমস্যা হয় এবং করণীয় কি

হিমোগ্লোবিন হলো লোহিত রক্তকণিকার মধ্যে অবস্থিত এক ধরনের প্রোটিন, যার মধ্যে ট্রান্সপোর্টস অক্সিজেন ও আয়রন থাকে।

শরীরের লৌহের অভাব হলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে যায়। আর রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে রক্তস্বল্পতা বলা হয়।

রক্তের মধ্যে স্বাভাবিক হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে ১৩.৫ - ১৭.৫ গ্রাম বা ডেসিলিটার এবং মহিলাদের ক্ষেত্রে ১২ - ১৫.৫ গ্রাম বা ডেসিলিটার। 

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে কি সমস্যা হয় ?

রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে শরীরে নিম্নোক্ত সমস্যা দেখা দেয়।
  • মাথাব্যথা করা,
  • ক্লান্তি বোধ করা,
  • শ্বাসকষ্ট হওয়া,
  • অক্ষমতা,
  • শরীর দুর্বল লাগা,
  • মাথা ঘোরা,
  • ক্ষুধামন্দা,
  • মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া,
  • হাত পা অবশ হয়ে আসা ইত্যাদি।
উপরোক্ত সমস্যা বা লক্ষ্যণ গুলো দেখা দিলে তা অবহেলা না করে যত দ্রুত সম্ভব একজন রেজিষ্টার ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়

কোনো কারণে রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে গেলে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করতে হবে। কেননা পুষ্টিকর খাবার রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করে। যেমন-
  • আয়রন সমৃদ্ধ খাবার: রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কলিজা, চিংড়ি, ডিম, লাল মাংস (গরু, মহিষ, ছাগল ইত্যাদি), পালংশাক, কাঠবাদাম, কুমড়ার বীজ, খেজুর, শতমূলী, কচু শাক ইত্যাদি খাওয়া উচিত। আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খুব দ্রুত হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে থাকে।
  • রঙিন সবজি ও ফল: লাল আঙ্গুর, ডালিম, বিটরুট, আপেল এগুলোর মধ্যে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ফাইবার রয়েছে যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। এগুলোর মধ্যে ডালিম সবচেয়ে দ্রুত রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে পারে।
  • সামুদ্রিক মাছ: সামুদ্রিক মাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে লৌহ পাওয়া যায়, যা রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন সি এর অভাবেও রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি দেখা দেয়। একারণে সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন: কমলা লেবু, আঙ্গুর, পেয়ারা, লেবু, স্ট্রবেরি, ব্রকলি, টমেটো, কাঁচা মরিচ ইত্যাদি নিয়মিত খেতে হবে।
মনে রাখবেন স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত পরিমাণে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে রক্ত দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিন কমে গেলে করণীয়

গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ফলিক অ্যাসিড ও আয়রন ট্যাবলেট গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত চেকআপ করতে হবে। এছাড়াও লৌহ, আয়রন, ফলিক এসিড ও ফাইবারযুক্ত খাবার গ্রহণ করতে হবে। যেমন-
  • শুকনো ফল: শুকনো ফলে আয়রন থাকে, যা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে। তাই এই সময় খাবার তালিকায় কিশমিচ, আখরোট, খেজুর, কাঠবাদাম, কাজুবাদামের মতো কিছু শুকনো ফল যোগ করতে পারেন।
  • ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার: গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার যেমন: ভোকাডো, শালগম, ঢেঁড়শ, স্প্রাউটস, মটরশুঁটি, পালং শাক ইত্যাদি খাওয়া প্রয়োজন। কারণ ফলিক এসিড হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকে।
  • ডাল: ডালের মধ্যে আয়রন ও প্রোটিন থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় প্রতিদিনের খাবার তালিকায় ১ বাটি ডাল অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
  • স্মুদি: গর্ভাবস্থায় বিটরুট, গাজর এবং আপেলের তৈরি স্মুদি খেতে পারেন। কেননা এটি রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে সাহায্য করে।
  • বিটরুট: বিটরুটে প্রচুর আয়রন, ফাইবার, ফলিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম রয়েছে। তাই গর্ভাবস্থায় রক্তে হিমোগ্লোবিন বাড়াতে বিটরুটের রস খেতে পারেন।
  • ডালিম: ডালিম রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাবার তালিকায় এক গ্লাস ডালিমের জুস যোগ করতে পারেন।
  • বিভিন্ন প্রকারের বীজ: গর্ভাবস্থায় কিছু আয়রন সমৃদ্ধ বীজ যেমন- সূর্যমুখী বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, শিমের বীজ ইত্যাদি খেতে পারেন। এগুলো রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ানোর সাথে সাথে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url