টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে

গলার ভিতরে দুই পাশে দুটি গ্রন্থি থাকে যাকে টনসিল বলা হয়। টনসিল খাবারের সঙ্গে বা অন্য যেকোনো ভাবে মুখ থেকে শরীরের ভিতরে জীবাণু প্রবেশ করাকে আটকায় এবং তা ধ্বংস করে মানবদেহের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

টনসিল হলে গলা ব্যথা করা, খাবার গিলতে কষ্ট হওয়া ইত্যদি লক্ষণ দেখা দেয়। টনসিল হলে সব ধরনের খাবার রোগীরা খেতে পারে না। তাই এ সময় কি খাওয়া উচিত আর কি খাওয়া উচিত নয় তা জানা অত্যন্ত জরুরি। তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে আর কি কি খাওয়া যাবে না।

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে

টনসিল হলে রোগীর গলা ব্যথা হয় এবং খাবার গিলতে কষ্ট হয়। তাই টনসিলের রোগীদের নরম ও তরল খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। নিচে এর কিছু উদাহরণ দেওয়া হলো-
  • নরম খাবার: টনসিল হলে শক্ত খাবার খাওয়া উচিত নয়। কেননা শক্ত খাবার গিলতে অনেক কষ্ট হয়। এমনকি অনেক সময় অসহ্য ব্যথা হয়। তাই টনসিল হলে শক্ত খাবার না খেয়ে নরম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন। রুটি বা শক্ত ভাত না খেয়ে কয়েক দিন জাউ ভাতের সঙ্গে হালকা মশলা দিয়ে নরম করে রান্না করা তরকারি খেতে পারেন।
  • স্যুপ জাতীয় খাবার: টনসিলের রোগী স্যুপ জাতীয় খাবার খেতে পারেন। এতে করে খাবার গিলতে কোন কষ্ট হবে না।
  • কুসুম গরম পানি: এ সময় কুসুম গরম পানি খেলে রোগী গলা ব্যথায় উপশম পায়। তাই পানি পান করার আগে হালকা গরম করে নেবেন।
  • লবণ জল দিয়ে গার্গল: গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে গার্গল করলে টনসিলের ব্যথা থেকে উপশম পাবেন।
  • দুধ ও কাঁচা হলুদ: টনসিলের কারণে গলা ব্যথা হলে গরম দুধের সাথে অল্প একটু কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে খেলে ব্যথা থেকে উপশম পাবেন। আপনি চাইলে হলুদ চা বানিয়ে খেতে পারেন।
  • মধু চা: গলা ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে মধু চা অত্যন্ত কার্যকারী। তাই চায়ের সাথে কিছুটা পরিমাণে মধু মিশিয়ে পান করলে, কিছুক্ষণের মধ্যে গলা ব্যথা থেকে আরাম পাবেন।

টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না

টনসিল ছোট বড় সকলের জন্য একটি পীড়াদায়ক রোগ। সেজন্য টনসিল হলে সব ধরনের খাবার খাওয়া উচিত নয়। নিচে টনসিল হলে কি কি খাওয়া যাবে না তা তুলে ধরা হয়েছে-
  • জাঙ্ক ফুড বা ফাস্ট ফুড: ফাস্ট ফুড জাতীয় খাবার একদম খাওয়া যাবে না অর্থাৎ ফ্রাই চিকেন, পিৎজা, ফুচকা, চিপ্স, বার্গার, চানাচুর, সফট ডিংকস ইত্যাদি।
  • অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার: টনসিল রোগীদের অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। কেননা অতিরিক্ত মশলাযুক্ত খাবার খেলে টনসিল বেড়ে যেতে পারে।
  • টক জাতীয় খাবার: টক জাতীয় খাবার গলা ব্যথা বাড়িয়ে তুলতে পারে। তাই টক জাতীয় খাবার  যেমন- বরই, লেবু, কাঁচা আম, তেঁতুল আমলকি, চালতা, জলপাই, কমলা, আনারস ইত্যাদি এড়িয়ে চলতে হবে।
  •  ব্রকলি, বাঁধাকপি এবং ফুলকপি: টনসিল হলে ব্রকলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি খাওয়া যাবে না। কেননা এই খাবার গুলো টনসিলের সমস্যা বাড়িয়ে তুলে এবং গলা ফোলা কমতে দেয় না।
  • শক্ত খাবার: কোনো প্রকারের শক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন- গরুর মাংস, খাসির মাংস, রুটি ইত্যাদি। কেননা শক্ত খাবার খেলে টনসিলের ব্যথা এবং ফোলাভাব বেড়ে যেতে পারে।
  • ঠান্ডাজানিত খাবার: টনসিলের সমস্যা থাকলে ঠান্ডাজানিত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। যেমন- আইসক্রিম, ঠান্ডা কোমল পানীয়, ফ্রিজ থেকে বেড় করা ঠান্ডা পানি ইত্যাদি। কেননা ঠান্ডা খাবার খেলে টনসিলের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
  • ধূমপান ও মদ্যপান: ধূমপান ও মদ্যপানের অভ্যাস থাকলে তা ত্যাগ করতে হবে। কেননা ধূমপান ও মদ্যপান টনসিল ছাড়াও আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য অনেক ক্ষতিকর।

টনসিল অপারেশনের পর কি কি খাওয়া যাবে

টনসিল অপারেশনের ৪ ঘণ্টা পর থেকে রোগীর মুখে খাবার দেওয়া যাবে। তবে মনে রাখবেন সব ধরনের খাবার রোগীকে দেওয়া যাবে না। রোগীকে যে খাবার গুলো দিতে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো-

  • ঠান্ডাজনিত খাবার: টনসিল অপারেশনের প্রথম দিকে ঠান্ডা খাবার দিতে হবে। যেমন- আইসক্রিম, ঠান্ডা জুস বা পানি। তবে অপারেশনের ২৪ ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পর আইসক্রিম দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে খাবার খাওয়ার পরে ঠান্ডা পানির সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে মাউথওয়াশ মিশিয়ে কুলি গড়গড়া করতে হবে, যাতে করে খাবার মুখে জমে না থাকে।
  • নরম জাতীয় খাবার: রোগীকে প্রথম ৭ দিন চিবানো লাগে না বা গিলতে অসুবিধা হয় না এমন খাবার দিতে হবে। যেমন- ফিরনি, দুধে ভিজিয়ে নরম পাউরুটি, সেমাই, নরম খিচুড়ি বা জাউভাত, স্যুপ ইত্যাদি। তবে লক্ষ্য রাখবেন রোগীকে দেওয়া খাবার যেন গরম না হয়। কেননা গরম খাবার খেলে অপারেশনের স্থানে ব্যথা বা রক্তপাত হতে পারে।
  • ঠান্ডা পানি: অপারেশনের পরে রোগীকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ঠান্ডা পানি খাওয়াতে হবে, যা ব্যথা কমাতে সহায়তা করবে।

টনসিল অপারেশনের পর কি কি খাওয়া যাবে না

টনসিল অপারেশন হলে রোগীকে ভুলেও যেসব খাবার দেওয়া যাবে না তা নিচে তুলে ধরা হলো-
  • গরম খাবার: টনসিল অপারেশনের পর গরম খাবার খাওয়া যাবে না। যেমন- গরম ভাত, গরম স্যুপ, গরম দুধ, গরম কফি, গরম চা ইত্যাদি। তবে এই খাবার গুলো খেতে ইচ্ছা করলে ঠান্ডা করে খেতে পারেন। কেননা গরম খাবার খেলে অপারেশন হওয়া স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
  • শক্ত খাবার: টনসিল অপারেশনের পরে শক্ত খাবার একদম খাওয়া যাবে না। যেমন- চিপস, বিস্কুট, মুড়ি, খই, ফুচকা, সিঙ্গারা, শক্ত পিঠা, সমুচা, চানাচুর ইত্যাদি। এই খাবার গুলো খাওয়ার সময় অপারেশন হওয়া স্থানে আঘাত লাগতে পারে। যার ফলে রক্তপাত হতে পারে।
  • ঝাল ও মশলাযুক্ত খাবার: টনসিল অপারেশন হওয়ার পর ঝাল ও মশালযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। কেননা এই খাবার গুলো খেলে অপারেশন হওয়া স্থানে জ্বালাপোড়া করতে পারে। তাই এই খাবার গুলো এড়িয়ে চলা উচিত।
  • কাটাযুক্ত খাবার: টনসিল অপারেশন হওয়ার পর কাটা যুক্ত খাবার অর্থাৎ মাছ খাওয়া যাবে না। তবে অপারেশনের পরে একদম মাছ খাওয়া যাবে না তা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে ভালো করে কাটা বেছে মাছ খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন অপারেশনের পরে একদম ছোট মাছ খাওয়া যাবে না। কেননা মাছের কাটা খুব সহজেই অপারেশনের স্থানে ফুটে যেতে পারে। যার ফলে অপারেশনের স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url