ব্রেন টিউমার কি? কেন হয়? লক্ষণ কি কি?

ব্রেন টিউমার কেন হয়

দিন দিন কেমন যেনো রোগ-শোক বেড়েই চলেছে। দিব্যি ভালোমানুষ হাটা চলা করছে অথছ হঠাৎ করেই ভীষন অসুস্থ হয়ে পড়েন। কোন কারণে, কি রোগ হচ্ছে তা ঠিক ভাবে বলাও মুসকিল। কেউ সারা জীবন নেশা জাতীয় দ্রব্য খেয়েও সুস্থ আছেন আবার কেউ জীবনে এক বারো নেশা করেনি অথচ ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছেন। যাইহোক আমরা আর এ দিকে যাব না আজকে আমরা ব্রেন টিউমার কি? কেন হয় ও এর লক্ষন গুলো জানব। আপনি যদি ব্রেন টিউমার সম্পর্কে জানতে চান তাহলে নিচের লেখাটি সম্পূর্ণ মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

ব্রেন টিউমার

যখন ব্রেনের ভিতরে অস্বাভাবিক ভাবে কোষ বৃদ্ধি পায়, তখনি ব্রেন টিউমারের সৃষ্টি হয়। পরে ধীরে ধীরে টিউমার বড় হতে থাকে এবং ব্রেনের ভেতরে চাপ পড়তে থাকে ফলে ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ব্রেন টিউমার দুই প্রকারের হয়ে থাকে। যথা:
  • ম্যালিগ্যান্ট টিউমার এবং
  • বেনাইন টিউমার।

ম্যালিগ্যান্ট টিউমার হচ্ছে ক্যান্সারযুক্ত টিউমার আর বিনাইন টিউমার হচ্ছে ক্যান্সারহীন টিউমার। ম্যালিগ্যান্ট টিউমার বিনাইন টিউমারের থেকে অনেক বেশি ব্রেনের ভিতরে চাপ সৃষ্টি করে।

ব্রেন টিউমার হলে সঠিক সময় চিকিৎসা করা খুবি জরুরী। তাই আমাদের জানতে হবে ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণ এবং লক্ষণগুলো সম্পর্কে।

ব্রেন টিউমার কেন হয়?

ব্রেন টিউমারের হওয়ার সঠিক কোনো কারণ এখনো নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। বিভিন্ন কারণে ব্রেন টিউমার হতে পারে। তবে সাধারণত, নিম্নলিখিত কারণগুলিকে ব্রেন টিউমারের উল্লেখযোগ্য কারণ বলে মনে করা হয়।
  • তখনি ব্রেন টিউমার হয় যখন ব্রেনের স্বাভাবিক কোষগুলির ডিএনএ (DNA)-তে কোনো ত্রুটি দেখা দেয়।
  • ব্রেন টিউমার হাওয়ার কারণ হল ব্রেনের ভিতরের এক বা একাধিক কোষ অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়া।
  • পুরাতন কোষগুলো নষ্ট না হয়ে একইভাবে থেকে যাওয়া এবং নতুন কোষ গুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া।
  • নষ্ট না হওয়া পুরানো কোষগুলো এক স্থানে জমা হয়ে টিউমার সৃষ্টি হয়।
  • অনেক সময় বংশগতভাবে ব্রেন টিউমার হতে পারে। অর্থাৎ পিতা-মাতা বা তাদের বংশানুক্রমিকভাবে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনের কারো ব্রেন টিউমার থাকলেও ভবিষ্যৎ সন্তানের হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

ব্রেন টিউমারের লক্ষণ

অনেক সময় প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ প্রকাশ পায় না। কিন্তু বেশিরভাগ রোগীর ক্ষেত্রে যে লক্ষণগুলো প্রকাশ পায় তা হলো-

১. মাথা ব্যাথা:

মাথা ব্যথা ব্রেন টিউমারের অতি পরিচিত একটি লক্ষণ। এই লক্ষণটি প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে প্রকাশ পায়। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর মাথা ব্যথার ধরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন-
  • সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রচন্ড মাথা ব্যথা অনুভব করা।
  • প্রচন্ড মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব হওয়া বা বমি হওয়া।
  • বেশি নড়াচড়া করলে, কাশলে বা ব্যায়াম করার সময় বেশি ব্যথা অনুভব করা।
  • সারাদিন মাথা ব্যথা করা, কিন্তু বিভিন্ন সময় তীব্রতার পরিবর্তন লক্ষ্য করা।
  • সাধারণ মাথা ব্যথার ঔষুধ খাওয়ার পরেও ব্যথা না কমা।
নোট: কোনো কোনো ক্ষেত্রে অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকার কারণে, স্ট্রেস বা মানসিক চাপের কারণে বা অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করার কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। তাই মাথা ব্যথা হলেই ভয় পেতে হবে বিষয়টা এমন না, সে জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

২. দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া

টিউমার হলে অনেক সময় দৃষ্টিশক্তি কমে যেতে পারে।

৩. কথা বলা ও হাতের লেখার ধরণে পরিবর্তন হওয়া

সেরিব্রাম, প্যারাইটাল গ্ল্যান্ডে বা টেম্পোরাল লোব ও লঘু মস্তিষ্ক বা সেরিবেলাম টিউমার হলে কথা বলা ও হাতের লেখার ধরণে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে।

৪. ব্যক্তির আচরণে পরিবর্তন

ব্রেন টিউমার হওয়ার কারণে মেজাজ খারাপ হওয়া, তাছাড়াও আচরণের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। সাধারনত যে সকল আচরণ গুলোর পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় সেগুলো হলো-

  • ছোট খাটো বিষয় নিয়ে বিরক্ত হওয়া এবং বিরক্ত ভাব অনেক সময় স্থায়ী হওয়া।
  • সাধারণ বা ছোট খাটো বিষয় নিয়ে বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি সৃস্টি করা।
  • কাজ কে অবহেলা করা, ক্লান্তি অথবা প্রতিদিনের কাজ করতে অনীহা দেখা দেওয়া।
  • কোনো কারণ ছাড়া মুড চেঞ্জ হওয়া।
  • আগে প্রতিদিন যে কাজ গুলো করতে ভালো লাগতো বা প্রিয় ছিল বর্তমানে সেই সকল কাজের প্রতি টান না থাকা। এক কথায় বলা যায় নিজের পছন্দের জিনিসকে ঘৃণা করতে শুরু করা।

৫. স্মৃতিভ্রংশ

  • সহজেই বিভ্রান্তি দেখা দেওয়া, যা রোজগার কাজের মধ্যে প্রকাশ পায়। যেমন- দিকনির্নয় করতে না পারা বা সময়ের সাথে সাথে লোকের নাম পরিচয় ভুলে যাওয়া ইত্যাদি।
  • একসাথে অনেক কাজ করার ক্ষমতা নষ্ট হওয়া।
  • ব্রেন টিউমার হলে শর্ট টার্ম মেমরি লস বা স্মৃতিভ্রংশের লক্ষণ দেখা দেয়। স্মৃতিভ্রংশের এই লক্ষণটি ব্রেন টিউমারের প্রধান লক্ষণ।
  • কোনো কাজে মনঃসংযোগ করতে না পারা।

৬. দেহের ভারসাম্য নষ্ট হওয়া

ব্রেন টিউমার হলে দেহের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়।

৭. শরীরের খিচুনি হওয়া

ব্রেন টিউমারের অতি পরিচিত একটি লক্ষণ হল শরীরের খিচুনি হওয়া। এই লক্ষণটি ৫০ শংতাশ রোগীর ক্ষেতে দেখা দেয়।

নোট: এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে আবশ্যই চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করবেন। টিউমার নির্ণয়ের শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পাশাপাশি সিটিস্ক্যান বা এমআরআইও করা প্রয়োজন। প্রাথমিক অবস্থায় ব্রেন টিউমার ধরা পড়লে মহান সৃষ্টি কর্তার রহমতে চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url