কেমন আছেন কুয়েতে নার্সরা? কুয়েতে বাংলাদেশি নার্সদের ভবিষ্যৎ কি?

কুয়েতে বাংলাদেশি নার্সদের ভবিষ্যৎ

কেমন আছেন কুয়েতে নার্সরা?

১৯ জুন ২০২২ ইং তারিখে মাত্র ৫০ জন নার্সের কুয়েত গমনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে বয়েসেলের মাধ্যমে নার্স প্রেরণ। এর পর ধাপে ধাপে বেশ কয়েকবার নার্স গিয়েছেন কুয়েতে। বর্তমানে প্রায় ৭০০ জন নার্স কুয়েতে অবস্থান করছেন। [৬৫০+ বয়েসেলের মাধ্যমে]

নার্স প্রেরণের পর থেকে আমরা নিয়মিত খবর নিচ্ছিলাম, কেমন আছেন আমাদের নার্সগণ। দুঃখ জনক হলেও সত্য, অনেক নার্স কুয়েতে পৌঁছানোর ৩ মাস পার হয়ে গেলেও পাননি কোনো হাসপাতালে যোগদানের সুযোগ। এমনকি নির্ধারিত বেতন ভাতার কিছুই পাননি অনেকে। কারো ক্ষেত্রে জানা গিয়েছে ৫ মাস ধরে চলছিল এমন ঘটনা। এতে আমরা ব্যাথিত হলেও করার মতো তেমন কিছু ছিলনা। মূলত ভাষাগত অদক্ষতা এবং কুয়েতের কাগজপত্র জনীত কিছু অভন্ত্যরীন জটিলতার কারণে বেশ কিছু নার্সকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে।

তবে আশার আলো দেখছে এখন শতভাগ বাংলাদেশি নার্স। প্রাথমিকভাবে নানান জটিলতায় পড়লেও বর্তমানে বাংলাদেশি নার্সরা নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছে। যেকারণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী চলতি জুন মাসের শুরুর দিকে এক প্রেস বিফিংয়ে জানিয়েছিলেন, কুয়েতে সরকারিভাবে নার্স প্রেরণের অনেক বড় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জিটুজি চুক্তির মধ্য দিয়ে। যা বাংলাদেশের জন্য এবারি প্রথমবারের মতো সুযোগ।

কুয়েতে নার্স

কুয়েতে বাংলাদেশি নার্সদের ভবিষ্যত কি?

বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘদিন ধরে কুয়েত সরকারের সাথে জিটুজি চুক্তি করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। কারণ জিটুজি চুক্তিতে আবদ্ধ হলে এদেশ থেকে প্রতি বছর অনেক বেশি পরিমাণে দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করা সম্ভব হবে বর্তমানের চেয়ে। যাইহোক, দীর্ঘ প্রোচেষ্টার পর গত ৩১ মে বাংলাদেশ সরকার জিটুজি চুক্তি সম্পন্ন করেছে কুয়েত সরকারের সাথে। এছাড়াও কুয়েতের পররাষ্ট্য মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশি নার্দের দক্ষতার প্রশংসা করেছে এবং ভবিষ্যতে আরো বেশি নার্স নেওয়ার অঙ্গিকার করেছেন।

জিটুজি চুক্তি কি?
কোনো একটি দেশের সরকারের সাথে অন্য কোনো দেশের সরকারের মধ্যে হওয়া চুক্তিকে জিটুজি বলে। এই চুক্তির অধীনে বাংলাদেশ থেকে কোনো নার্স কুয়েতে প্রেরণ করতে আর কোনো মধ্যস্থতাকারী কম্পানির প্রয়োজন হবেনা। ইতোপূর্বে বয়েসেল দুই/ তিনটি কম্পানির সাথে চুক্তি করে নার্স প্রেরণ করেছে। ভবিষ্যতে আর কোনো কম্পানিকে প্রয়োজন হবেনা। এজন্য কুয়েত সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বাংলাদেশের তুলনায় অনেক গুন বেশি নার্স কুয়েতে জব করছে। সম্প্রতি কুয়েত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা বিভিন্ন দেশ থেকে নির্দিষ্ট অনুপাত হারে নার্স, ডাক্তারসহ বিভিন্ন পেশায় কর্মী নিয়োগ দেবে। এর ফলে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে ভারত, মায়ানমার ও ভুটান থেকে নার্স প্রেরণের বর্ধিত কোটা না পেলেও বাংলাদেশ পাবে প্রায় ২০০০ জন নার্স প্রেরণের পত্র। আর এই নতুনভাবে নার্স প্রেরণের কার্যক্রম আগস্টের শুরুর দিকে শুরু হতে পারে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিগণ।

কারা যেতে পারবেন কুয়েতে?

আমরা ইতোমধ্যে জানি বোয়েসেলের মাধ্যমে যারা কুয়েত গিয়েছেন, তাদেরকে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হতে হয়েছে। তবে লক্ষ্যনীয় বিষয় হলো: প্রথম ধাপে বিভিন্ন সরকারী ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতালের অভীজ্ঞ নার্সদের প্রাধান্য দিয়ে বাছাই করা হয়েছিল। পরবর্তীতে সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি বেসরকারী খাতের স্বনামধন্য হাসপাতালগুলো থেকে নার্স নেয়া হয়েছে। যেহেতু বাংলাদেশ এবারি প্রথমবারের মতো নার্স প্রেরণ করার সুযোগ পেয়েছে, তাই দীর্ঘ অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নার্সদেরকই অধিক গুরত্ব দেয়া হয়েছে।
পাসপোর্ট

তবে জিটুজির আওতায় অধিক পরিমাণে নার্স প্রেরণ করার সুযোগ সৃষ্টি হলে মধ্যবর্তী লেভেলের বেসরকারী হাসপাতালের নার্গগণ কুয়েত যাওয়ার সুযোগ পেতে পারবেন সহজেই।

কুয়েতের নার্সদের কিধরণের প্রতিকুলতা দেখা দিতে পারে?

বাংলাদেশ থেকে প্রেরণকৃত নার্সদের জন্য ভাষাগত প্রতিকূলতার সম্মুখিন হতে হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। রোগির সাথে কথা বলতে এবং অফিশিয়াল সকল কার্যক্রম যথাযথভাবে করতে নিশ্চয় কুয়েতের স্থানীয় ভাষা জানাটা জরুরি হবে। তাছাড়া ইংরেজি ভাষাতেও যথেষ্ট পারদর্শী হতে হবে। কারণ কুয়েতের প্রায় ৬০% বাসিন্দা ভিনদেশি। কুয়েতের নিজ দেশের জনগণের চেয়ে বিদেশীদের পরিমাণ বেশি হওয়ায়  অনেক ক্ষেত্রেই ইংরেজি জানার আবশ্যকতা দেখা দেবে।

মূলত যেসকল নার্সদের প্রেরণ করা হয়েছে তারা যথেষ্ট অভিজ্ঞ ছিল। যেকারণে কর্মক্ষেত্রে তেমন কোনো প্রতিকূলতার সম্মুখিন হতে হয়নি কাউকে।

কুয়েতে নার্সদের বেতন কেমন?

বোয়েসেলের মাধ্যমে প্রেরণকৃত নার্সদের মধ্যে বি.এস.সি নার্সদের ৯০ হাজার এবং ডিপ্লোমা নার্সদের ৮০ হাজার করে নির্ধারিত হয়েছে। তবে জিটুজির আওতায় নতুন যে সকল নার্স প্রেরণ হবে তাদের বেতন আরো বেশি হবে বলে জানা গিয়েছে ( নূন্যতম ১ লাখ টাকার উপরে নির্ধারণ করা হবে)।

কুয়েতে কি শুধু নার্সদেরি নেবে?

দক্ষ জনশক্তির মধ্যে নার্স এবং বিভিন্ন টেকনিক্যাল জনশক্তি প্রেরণ করা হবে [জিটুজিট চুক্তি অনুসারে]। ইতোপূর্বে বাংলাদেশ শুধুমাত্র কৃষি, গৃহস্থলি ও নির্মাণ শিল্পে লেবার পোস্টে জনশক্তি রপ্তানী করতো, এসময় নামে মাত্র কিছু দক্ষ জনশক্তি প্রেরণ করা হতো।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url