মাথা ব্যথা কমানোর ঔষধ ও ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথা কমানোর ঔষধ ও ঘরোয়া উপায়

মাথা ব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যা ভোগ করেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তীব্র মাথা ব্যথা হলে যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি তৈরি হয়। এই মাথা ব্যথা কোন রোগ নয়, এটি একটি লক্ষণ মাত্র। সাধারণত কম ঘুম হওয়া, পানিশূনত্য, সময়মতো খাবার না খাওয়া, সাইনাসের সমস্যা, দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ, মাদকাসক্ত ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে।

মাথা ব্যথার কারণ

মাথা ব্যথা করার সাধারণ কয়েকটি কারণ হলো:
  • ধূমপান ও মদ্যপান করা,
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম না হওয়া,
  • মাইগ্রেনের সমস্যা,
  • পানিশূন্যতা,
  • অনেক সময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকা,
  • রোদ অথবা অতিরিক্ত গরম আবহাওয়া,
  • অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম করা,
  • সাইনাসের সমস্যা হওয়া,
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ,
  • অনিয়মিত ও অতিরিক্ত পরিমাণে ঘুমের ওষুধ গ্রহণ করা ইত্যাদি।
উপরে উল্লেখিত অভ্যাস বা সমস্যাগুলোর পরিবর্তন বা সমাধান করলে মাথা ব্যথার সমস্যা অনেকাংশ কমে যাবে।

মাথা ব্যথা কমানোর ঔষধ

মাথা ব্যথা কামানোর ১০টি ঔষধের নাম নিচে তুলে ধরা হলো:

Tufnil (টাফনিল)

টাফনিল ঔষধটি হালকা থেকে মাঝারি বা মাইগ্রেনের ব্যথা কমানোর জন্য খেতে পারেন। মাথা ব্যথা যদি তীব্র হয় তাহলে ১০০ বা ২০০ মি. গ্রা. এর ১টি বা ২টি ঔষুধ খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই ঔষধটি শুধুমাত্র প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। এছাড়াও এই ঔষধটি খালি পেটে খাওয়া যাবে না। অবশ্যই ভরা পেটে খেতে হবে।

টাফনিল (Tufnil) ঔষধ খাওয়া পরে এলার্জি বেড়ে যাওয়া, ডায়রিয়া, বমি বমিভাব, পেটে ব্যথা, শরীরের পানি জমা, ক্লান্তি লাগা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে ঔষধটি গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এছাড়াও গর্ভাবস্থায় বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় এই ঔষধটি এড়িয়ে চলা ভালো।

Napa Extra (নাপা এক্সট্রা)

জ্বর জনিত মাথা ব্যথা দূর করতে নাপা এক্সট্রা অত্যন্ত কার্যকারী। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের মাথা ব্যথা ও মাইগ্রেনের ব্যথা দূর করতে নাপা এক্সট্রা খেতে পারেন। কিন্তু নাপা এক্সট্রাতে ক্যাফেইন নামক এক ধরনের উপাদান রয়েছে। যার কারণে ঘুম হয় না। তবে এটি খেলে মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায়।

মাথা ব্যথা দূর করার জন্য ঘুম অত্যন্ত জরুরি। তাই মাথা ব্যথা কমাতে চিকিৎসাকরা এই ঔষধটি এড়িয়ে যায়। তবে মাথা ব্যথা কমানোর জন্য নাপা এক্সট্রার বদলে নাপা বা এইচ প্লাস খেতে পারেন।

Tolfem (টলফেম)

যেকোনো ধরনের মাথা ব্যথা কমাতে টলফেম অত্যন্ত কার্যকারী। হালকা থেকে মাঝারি মাথা ব্যথা হলে ১০০-২০০ মি. গ্রা. এর টলফেম দিনে ৩ বার খেতে পারেন। এছাড়াও যদি তীব্র মাইগ্রেনের ব্যথা হলে তাহলে ঔষধটি খেতে পারেন।

টলফেম ঔষধটি সেই রকম কোন ক্ষতিকর দিক নেই। তবে গর্ভাবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঔষধটি খাওয়া উচিত নয়।

Anilic (এনিলিক)

মাইগ্রেনের বাথ্য ও জ্বর জনিত মাথা ব্যথা দ্রুত কমানোর জন্য এনিলিক খেতে পারেন। মাথা ব্যথা যদি হালকা থেকে মাঝারি হয় তাহলে দিনে ৩ বার এই ঔষধটি খেতে পারেন। এছাড়াও ঘুম না আসার কারণে বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের কারণে যদি মাথা ব্যথা হয় তাহলে ঔষধটি খেতে পারেন।

উচ্চ রক্তচাপ, পাকস্থলীর আলসার, অ্যাজমা, লিভার সংক্রমণে ও বস্কয়দের ক্ষেত্রে এনিলিক গ্রহণ করার আগে চিকিৎসকরে সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

Arain (এ্যারেইন)

যেকোন ধরনের মাথা ব্যথা কমাতে এ্যারেইন খেতে পারেন। মাথা ব্যথা যদি হালকা থেকে মাঝারি হয় তাললে দিনে ৩ বার খেতে পারেন। এছাড়াও যদি তীব্র মাইগ্রেনের ব্যথা হয় তাহলে ২ ঘন্টা পরে আবার একটি খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন ঔষধটি ভরা পেটে খেতে হবে।

এ্যারেইন ঔষধটি গর্ভাবস্থায় এড়িয়ে চলা উচিত। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ঔষধটি খেতে পারেন। এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, ডায়রিয়া, লিভার সংক্রমণে ইত্যাদি সমস্যা থাকলে তাদের ঔষধটি গ্রহণ করার পূর্বে চিকিৎসকরে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Migratol (মাইগ্রেটল)

যেকোন ধরনের মাথা ব্যথা দূর করার জন্য মাইগ্রেটল ট্যাবলেট খেতে পারেন। মাথা ব্যথা যদি হালকা থেকে মাঝারি হয় তাললে দিনে ৩ বার ঔষধটি খেতে পারেন। 

Pizo-a 1.5 (পিজো-এ ১.৫ )

যেকোন ধরনের তীব্র মাথা ব্যথা দূর করতে পিজো-এ ১.৫ ঔষধটি খেতে পারেন। এছাড়াও যাদের রাতে ঘুম আসে না অথবা অস্থিয়তা ভোগেন তারা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ঔষধটি খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নিবেন।

Paracetamol (প্যারাসিটামল)

জ্বর ও ব্যথা উপশম করতে প্যারাসিটামল অত্যন্ত কার্যকারী। আর জ্বর জনিত মাথা ব্যথা দূর করতে ঔষধটি ভালো কাজ করে। শুধু জ্বর জনিত মাথা ব্যথা নয়, যেকোনো ধরনের ব্যথা যেমন- মাথা ব্যথা, শরীর ব্যথা, কান ব্যথা, দাঁতে ব্যথা ইত্যাদি দূর করতে প্যারাসিটামল খেতে পারেন।

যাদের গুরুতর কিডনির সমস্যা আছে তাদের প্যারাসিটামল গ্রহণ করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।

Namitol (নেমিটল)

তীব্র মাথা ব্যথা দ্রুত কমাতে নেমিটল অত্যন্ত কার্যকারী। তাই যাদের মাথা ব্যথা সহজে কমে না, আপরেশনের পরে মাথা ব্যথা, দুচিন্তা, তীব্র জ্বর ও মাইগ্রেনের জনিত মাথা ব্যথা হয় তারা নেমিটল খেতে পারেন। মাথা ব্যথা যদি হালকা থেকে মাঝারি হয় তাহলে দিনে ৩ বার ঔষধটি খেতে পারেন।

Ibuprofen (আইবুপ্রোফেন)

জ্বর, মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা ও মাইগ্রেন জনিত সমস্যা কমাতে আইবুপ্রোফেন খেতে পারেন। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ আইবুপ্রোফেন ৪০০ মি. গ্রা. দিনে ৩ বার খেতে পারেন। তবে কোন শিশুর ওজন ৫ কেজির কম হয় তাহলে ঔষধটি খাওয়ানো উচিত নয়।

আইবুপ্রোফেন খাওয়ার পরে বুক জ্বালা পোড়া করে এবং বমি বমিভাব দেখা দেয় তাহলে এটি এড়িয়ে চলা উচিত।

মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়

সাধারণ মাথা ব্যথা দূর করতে সকলে ঔষধ খান। কিন্ত যখন তখন ঔষধ খাওয়া শরীরের জন্য একদম ভালো না। তাই মাঝে মধ্যে ঘরোয়া উপায় মাথা ব্যথা কমানো উচিত।

মাথা ব্যথা কমানোর ঘরোয়া উপায়গুলো হলো:

  • দারুচিনি: দারুচিনি গুঁড়ো দিয়ে চা খেলে অথবা দারুচিনি তেল মাথা মালিশ করলে মাথা ব্যথা অনেকংশ কমে যাবে।
  • আদা: অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট যৌগ ভরপুর আদা। যদি চায়ের সাথে আদা মিশিয়ে খান তাহলে মাথা ব্যথায় আরাম পাবেন। ঠান্ডা জনিত মাথা ব্যথা কমাতে আদা চা অত্যন্ত কার্যকারী।
  • লবঙ্গ: চায়ের সাথে লবঙ্গ মিশিয়ে খেলে অনেক সময় মাথা ব্যথা দূর হয়ে যায়। লবঙ্গ থেঁতো করে একটি পরিষ্কার কাপরে পুটলি করে নিন। এরপর মাঝে মাঝে নাক কাছে ধরে গন্ধ শুকিন। লবঙ্গ চা খাওয়ার পাশাপাশি স্মেল থেরাপিও নিতে পারেন।
  • বিশ্রাম নিন: মাথা ব্যথা করলে শান্ত ও অন্ধকার কোনো ঘরে কিছু সময় বিশ্রাম নিন। তাহলে দেখবেন মাথা ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যাবে।
  • কোল্ড কম্প্রেস নিন: মাথা ব্যথা অনুভব করলে কপাল বা মাথার সামনের অংশে কোল্ড কম্প্রেস নিন বা ঠান্ডাজনিত কোনো বস্তু চেপে ধরুন। এতে করে মাথা ব্যথা থেকে উপশম পাবেন।
  • হিট থেরাপি নিন: মাথা ব্যথা করলে উষ্ণ কম্প্রেস নিন বা হিট থেরাপি ব্যবহার করুন। একটি পরিষ্কার কাপড় গরম পানিতে ভিজিয়ে ভালোভাবে চিপে চোখের ওপরে ধরে রাখুন। আরো ভালো হয় যদি হালকা গরম পানিতে গোসল করে নেন, বিশেষ করে যাদের টেনশনের কারণে মাথা ব্যথা হয়।
  • অ্যারোমাথেরাপি: ল্যাভেন্ডার, ইউক্যালিপটাস, পেপারমিন্ট মতো ইত্যাদি তেল মাথা ব্যথা দূর করতে সহায়তা করে। তাই সম্ভব হলে এই তেলগুলো মাথায় মালিশ করুন বা এসব সুভাস আশেপাশে ছাড়িয়ে দিন।

যদি গুরুতরভাবে মাথা ব্যথা হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে চলতে থাকে বা অন্যান্য কোনো লক্ষণের সাথে মাথা ব্যথা চলতে থাকে তাহলে যত দ্রুত সম্ভব ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কেননা মাথা ব্যথা বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হতে পারে।

মাথা ব্যথা সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: ঘন ঘন মাথা ব্যথার কারণ কি?
উত্তর: কম্পিউটার, মোবাইল ও টেলিভিশের পিছে অতিরিক্ত সময় ব্যয় করা, অতিরিক্ত পরিশ্রম করা, পর্যন্ত পরিমাণে না ঘুমানো, পরিমাণ মতো পানি পান না করা, অতিরিক্ত চা ও কফি গ্রহণ করা ইত্যাদি কারণে ঘন ঘন মাথা ব্যথা হয়।

প্রশ্ন: মাথার পেছনে ব্যথার কারণ কি?
উত্তর: অতিরিক্ত টেনশন, অতিরিক্ত ক্ষুধা লাগা, শরীর দুর্বল লাগা, উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক চাপ, ঘুম কম হওয়া, ধূমপান করা, শরীরিক সমস্যা ইত্যাদি কারণে মাথার পেছনে ব্যথা হয়।

প্রশ্ন: ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যাথা কেন হয়?
উত্তর: নিদ্রাহীনতা, অতিরিক্ত ঘুমানো, দুশ্চিন্তা, স্লিপ অ্যাপনিয়া ইত্যাদি কারণে ঘুম থেকে উঠার পর মাথা ব্যাথা হয়।

প্রশ্ন: মাথা ব্যথা কামানো ট্যাবলেটের নাম কি?
উত্তর: নেমিটল, প্যারাসিটামল, মাইগ্রেটল, টাফনিল, এনিলিক ট্যাবলেট মাথা ব্যথা কমাতে খেতে পারেন।

প্রশ্ন: মাথা ব্যাথা হলে কোন ডাক্তার দেখানো উচিত?
উত্তর: মাথা ব্যথা হলে একজন নিউরোলজিস্ট বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url