জিনসেং পাউডার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

জিনসেং পাউডার খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা

জিনসেং পাউডার পরিচিতি

জিনসেং হল Araliaceae (আরালিয়েসি) পরিবারের Panax (প্যানাক্স) গণের একটি উদ্ভিদ প্রজাতি। এটি মাংসল মূলবিশিষ্ট এক ধরনের বহুবর্ষজীবী উদ্ভিদ। এই উদ্ভিদটি উত্তর গোলার্ধে পূর্ব এশিয়াতে, বিশেষ করে কোরিয়া, চীন এবং পূর্ব সাইবেরিয়াতে ঠান্ডা পরিবেশে জন্মায়।

জিনসেংকে আশ্চর্য লতা বা Wonder Herbs বলা হয়ে থাকে। জিনসেং গাছের মূল সহস্র বছর ধরে চীনে আশ্চর্য রকমে শক্তি উৎপাদানকারী পথ্য হিসেবে ব্যবহত করে আসছে। এছাড়াও জিনসেং বিভিন্ন ধরনের গুনগান রয়েছে। এই জিনসেং গাছের মূল থেকে তৈরি হয় জিনসেং পাউডার।

জিনসেং পাউডার খাওয়ার নিয়ম

জিনসেং পাউডার একটি উপকারী উপাদান। তবে সঠিক নিয়ম মেনে না খেলে উপকারিতার চেয়ে অপকারিতা বেশি হতে পারে। তাই জিনসেং পাউডার খাওয়ার আগে নিময়গুলো জেনে নেওয়া উচিত। জিনসেং পাউডার খাওয়ার নিয়মগুলো হলো:
  • দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • উষ্ণ গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • চা বা কফির সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • জিনসেং পাউডার খালি পেটে বা খাবার খাওয়ার পরে খেতে পারেন।
একজন চিকিৎসাকের পরামর্শে করে জিনসেং পাউডার খেলে সবচেয়ে ভালো হয়। কেননা জিনসেং পাউডার খাওয়ার বিভিন্ন ধরনের ডোজ রয়েছে। যেমন- University of Michigan Health System এর রিপোর্ট অনুসারে, লিংগ উত্থান ও মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ৯০০ মি.গ্রা. পাউডার করে প্রতিদিন ৩ বার, ডায়বেটিস ও স্ট্যামিনা বা শক্তি বৃদ্ধির জন্য ২০০ মি.গ্রা. পাঊডার করে দিনে ১ বার এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ১০০ মি.গ্রা. করে দিনে ২ বার খেতে পারেন। এজন্য ডাক্তারের পরামর্শে জিনসেং পাউডার খাওয়া উচিত।

জিনসেং পাউডার খাওয়ার উপকারিতা

জিনসেং পাউডার খাওয়ার কয়েকটি উপকারিতা নিচে দেওয়া হলো:
  • রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পুরুষের দ্রুত র্বীযপাত রোধ করে।
  • কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • মানসিক চাপ, অবসাদ ও উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।
  • স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা বাড়িয়ে তোলে।
  • মিলনের আগ্রহ বৃদ্ধি করে।
  • ক্যান্সার ও হৃদরোগ ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
  • মেয়েলি হরমোন বৃদ্ধি করে।
  • পুরুষের লিঙ্গোত্থানের অক্ষমতা রোধ করে।
  • পুরুষের র্বীয ঘন এবং শুক্রাণু বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
  • হস্তমৈথুনের জন্য বেকে ও শিথিল হয়ে যাওয়া পেনিসকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

জিনসেং এর ক্ষতিকর দিক ও করনীয়

জিনসেং খুবেই উপকারি একটি উপাদান। এটি বিভিন্ন ধরনের রোগে থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে। তবে সব জিনিসের ভালো এবং খারাপ উভয় দিক রয়েছে। ঠিক তেমনি জিনসেংও উপকারিতার পাশাপাশি কিছু ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন:
  • জিনসেং অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলে পেটে ব্যথা, হার্ট বিট বাড়া, ব্লাড প্রেশারে তারতম্য হওয়া ও ডায়রিয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • নারীরা অতিরিক্ত পরিমাণে জিনসেং খেলে মাসিক বা পিরিয়ড অনিয়মিত দেখা দিতে পারে।
  • শরীরের ঋণাত্মক প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। কেননা জিনসেং একটি শক্তিশালী ভেজষ উপাদান।
  • জিনসেং মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল ঘুমের সমস্যা হওয়া। কেননা জিনসেং স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে তোলে এবং মানসিক ক্ষমতা বাড়ায়। উত্তেজিত স্নায়ুর জন্য রাতে ঘুম আসতে দেরি হয়, যেমন টা হয় কফি খাওয়ার পরে।
জিনসেং খাওয়ার পরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে জিনসেং খাওয়া বন্ধ করে দিতে হবে এবং দ্রুত ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে।

জিনসেং পাউডার সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: জিনসেং পাউডার খেলে কি হয়?
উত্তর: জিনসেং খেলে স্মৃতিশক্তি ও একাগ্রতা বাড়ে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ে ইত্যাদি।

প্রশ্ন: জিনসেং পাউডার কাদের খাওয়া উচিত নয়?
উত্তর: বাচ্চা, স্তন্যদানকারী মায়ের, ব্রেস্ট ক্যান্সারের রোগীদের, গর্ভবতী নারীদের, জরায়ু বা ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের রোগীদের, ঘুমের ও বিষন্নতার ওষুধ খান এমন মানুষে জিনসেং খাওয়া উচিত নয়।

প্রশ্ন: জিনসেং বৈজ্ঞানিক নাম কি?
উত্তর: জিনসেং বৈজ্ঞানিক নাম হলে প্যানাক্স ( Panax)।

প্রশ্ন: সবচেয়ে ভালো জিনসেং কোনটি?
উত্তর: আমেরিকান ও এশিয়ান জিনসেং দুটি মূলত ঔষধি গুনসম্পন্ন জিনসেং হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে থেকে এশিয়ান জিনসেং অপেক্ষাকৃত বেশি কার্যকরী। এই দুই ধরণের জিনসেং কে প্যানাক্স জিনসেং বলা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: সাদা নাকি লাল জিনসেং কোনটা ভালো?
উত্তর: জিনসেং লাল (খোসা সমেত) এবং সাদা (খোসা ছাড়ানো) এই দুই রকম রূপে পাওয়া যায়। এর মধ্যে থেকে লালটি  (খোসা সমেত) অধিক কার্যকরী।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url