শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম

শিমুল মূলে বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুণগান রয়েছে। যারা জন্য এই গাছটি সকলে কাজে ঔষধি গাছ হিসেবে পরিচিত। এই গাছের বৈজ্ঞানিক নাম ''Bombax Ceiba''। শিমলু গাছের উচ্চতা ১৫-২০ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। দক্ষিণ চীন, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও তাইওয়ানে এই গাছটি ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। তবে এখন বাংলাদেশেও শিমুল গাছ চাষ করার হয়। কিন্তু এই দেশের বেশির ভাগ মানুষ শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে জানেন না। তাই সকলের জন্য এই আর্টিকেল শিমুল মূলের উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

শিমুল মূলের উপকারিতা

শিমুল মূলের কয়েকটি উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:
  • রক্ত আমাশয় দূর করতে সাহায্য করে।
  • হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
  • শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে সাহায্য করে।
  • অতিরিক্ত রক্তস্রাব সমস্যা থাকলে তা দূর করে।
  • ছেলেদের বীর্য ঘন করে।
  • মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • পুরুষের অকাল বীর্যপাত রোধ করে।
  • পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর করে।
  • গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করে।
  • ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • সর্দি কাশির সমস্যা সমাধান করে।
  • যৌবন ধরে রাখতে সাহায্য করে।
  • মাসিক বা পিরিয়ড সময় পেটে ব্যথা হলে তা উপশম করে।
  • ডায়রিয়া সমস্যা দূর করে।
  • শরীরিক দুর্বলতা দূর করতে সাহায্য করে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে।
  • যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
  • পুরুষের শুক্রাণু বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে।
  • মুখের ব্রণ, মেছতা ও বিভিন্ন ধরনের দাগছোপ দূর করে।
  • প্রেসারের রোগীদের জন্য শিমুল মূল অনেক উপকারি।
  • অপুষ্টি জনিত সমস্যার জন্য শিমুল মূল অনেক উপকারি।

শিমুলের মূল খাওয়ার নিয়ম

যেকোনো জিনিস নিয়ম মেনে না খেলে উপকারিতার চেয়ে ক্ষতি বেশি হতে পারে। তাই শিমুল গাছের মূল খাওয়ার আগে নিয়মগুলো জেনে নেওয়া উচিত। শিমুলের মূল খাওয়ার নিয়মগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
  • ১ চা চামচ শিমুল মূলের গুড়ো ১ গ্লাস দুধের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন। বিশেষ করে ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকারিতা ভালো পাবেন।
  • ১ চা চামচ শিমুল মূলের পাউডার ১ কাপ পানিতে মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • ২-৩ চা চামচ মুধর সাথে ১ চা চামচ শিমুল মূলের পাউডার মিশিয়ে খেতে পারেন।
  • শিমুল গাছের মূল পানি দিয়ে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কাঁচা চিবিয়ে খেতে পারেন।
  • শিমুল মূল সকালে খালি পেটে খেলে উপকারিতা ভালো পাবেন।
তবে মনে রাখবে শিমুল মূল খাওয়ার পরে কোনো প্রকারের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তানা হলে সমস্যা আরো গুরুতর রূপ নিতে পারে।

শিমুল মূলের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

শিমুলের মূল ডাক্তারের পরামর্শ খেলে সেই রকম কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় না। তবে খাওয়ার ভুলের কারণে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। নিচে এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হলো:
  • জ্বর,
  • পেট ব্যথা করা,
  • গর্ভপাত,
  • শরীরের র‍্যাস বের হওয়া,
  • রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া,
  • বমি বা বমি বমিভাব হওয়া,
  • মাথা ঘোরা মতো ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কাঁচা শিমুল মূল খাওয়ার ফলে উপরোক্ত সমস্যাগুলো দেখা দিলে অবশ্যই একজন রেজিষ্টার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এছাড়াও শিমুল মূলের সাথে কোনো প্রকারের ভেষজ ঔষধ খেলে তা বন্ধ করতে হবে।

শিমুল মূলের পাউডার বানানোর নিয়ম

শিমুল মূলের পাউডার বানানোর নিয়মগুলো হলো:
  • প্রথমে শিমুল গাছ তুলে মূলগুলো পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিন।
  • এরপর মূলগুলো ছোট ছোট টুকরো করে রোদে শুকাতে দিন।
  • ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে ব্লেন্ডার দিয়ে মূলগুলো পাউডার বা গুঁড়ো করে নিন।
  • এই পাউডার বা গুঁড়ো র্দীঘদিন সংরক্ষণ করে রাখার জন্য কাচের বয়ামে ভরে রেখে দিতে পারেন।
শিমুল মূলের পাউডার বানিয়ে রাখলে খেতে সুবিধা হবে। এছাড়াও এই পাউডারে সাথে কোন প্রকারের ভেজাল মেশানো থাকবে না। যারা কারণে এটি শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি হবে।

শিমুল মূল সম্পর্কে প্রশ্নোত্তর

প্রশ্ন: খালি পেটে শিমুল মূল খাওয়ার উপকারিতা কি?
উত্তর: খালি পেটে শিমুল মূল খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ব্রণ দূর হয়, হজমে শক্তি বৃদ্ধি পায়, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর হয় ইত্যাদি।

প্রশ্ন: শিমুলের মূল কাঁচা খেলে কি হয়?
উত্তর: কাঁচা শিমুল মূল খেলে রক্ত আমাশয় দূর হয়, দৃষ্টিশক্তি ও শুক্রাণু বৃদ্ধি পায়, অতিরিক্ত ঋতুস্রাবের সমস্যা দূর হয় ইত্যাদি।

প্রশ্ন: শিমুল গাছের শিকড় খাওয়ার নিয়ম কি?
উত্তর: ১ গ্লাস গরম দুধ বা পানির সাথে ২টি শিকড় খেতে পারেন। তবে মনে রাখবেন শিমুল গাছের শিকড় খাওয়ার ৩০ মিনিটের মধ্যে কিছু খাওয়া যাবে না। তবে সকাল বেলা খালি পেটে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খেতে পারেন। এভাবেই সকাল এবং রাতে খেলে ১ সপ্তাহের মধ্যে পরিবর্তন দেখতে পাবেন।

প্রশ্ন: শিমুল গাছের ছাল খেলে কি হয়?
উত্তর: শিমুল গাছের ছাল গুঁড়ো করে ১-২ গ্রাম নিয়ে দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে রক্ত আমাশয় দূর হয়ে যাবে। বিশেষ করে ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকারিতা ভালো পাবেন। এছাড়াও শিমুল গাছের ছাল পরিষ্কার করে বেটে ফোড়ার ওপর প্রলেপ দিলেও উপকার পাবেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url