সাদাস্রাব কি? সাদাস্রাব কেন হয়?

অনেকেই সাদা স্রাবকে সাভাবিক ভাবে নিতে পারে না তাদের মনে হয়তো সারাক্ষণ ঘুরপাক খেতে থাকে সাদা স্রাব কেন হয়, সাদা স্রাব কখন হয়, স্রাব কি ও সাদা স্রাব না হলে কি হয় তাদের জন্য আজকের এই পোষ্ট; সাদা স্রাব সম্পর্কে জানতে হলে আমাদের এই পোষ্টটি আপনাদের মনযোগ সহকারে পড়তে হবে; আশা করছি উপকৃত হবেন এবং আপনার মনের সকল আশঙ্কা দূর হবে।

সাদাস্রাব কি?
সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া (মেডিকেল ভাষায় সাদা স্রাবকে লিউকোরিয়া বলা হয়) প্রতিটা নারীর শারীরের খুবই স্বাভাবিক একটি ঘটনা। সাদা স্রাব দেখতে দুধের মতো সাদা কিংবা স্বচ্ছ ও বর্ণহীন হালকা আঠালো ও পিছিল (পাতলা / ঘন সাদা স্রাব এবং গন্ধহীন) পানির আকারে মেয়েদের যোনিপদ দিয়ে নির্গত হয় তাকেই সাদা স্রাব বা লিউকোরিয়া বলে।

সাদাস্রাব কেন হয়:
সাদা স্রাব আপনার শরীরের কোনো ক্ষতি করে না, সাদা স্রাব যৌনিকে আর্দ্র ও পিচ্ছিল রাখতে সাহায্য করে এবং যৌনিতে জীবাণুর সংক্রমণে বাধা সৃষ্টি করে, যৌনিকে সুস্থ- সুরক্ষিত রাখার জন্যই মূলত সাদা স্রাব নির্গত হয়।

অতিরিক্ত সাদা স্রাব কেন হয়:
বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই অতিরিক্ত সাদা স্রাব হয়ে থাকে, যেমন:
  • মাসিকের আগে ও পরে
  • মাসিকের মঝামাঝি সময়ে (মাসিকের ১৪ তম দিন)
  • গর্ভবতী অবস্থায়
  • যৌন উত্তেজনার সময়ে
  • জন্মবিরতিকরণ পিল সেবনে
তবে হঠাৎ করে অতিরিক্ত মাত্রায় সাদা স্রাবের পরিমাণে বেড়ে গেলে তা যৌনিপথে ইনফেকশনের লক্ষণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

সাদা স্রাব এর লক্ষণ:
সাদা স্রাবের পরিমাণ সম্পর্কে অনেকেরি ধারনা নেই, স্বাভাবিক সাদা স্রাবের পরিমাণ দিনে ২ থেকে ৫ মিলিলিটার (কিছুটা কম বেশি হতে পারে)।৫ মিলিলিটার সাদা স্রাব যাদের যাচ্ছে তারা হয়তো ভয় করেন যে তাদের অতিরিক্ত সাদা স্রাব যাচ্ছে, তাদের এই নিয়ে ভয় পাবার কোন কারন নেই এটা স্বাভাবিক। তবে:
  • অতিরিক্ত সাদা রঙের চাকা চাকা স্রাব
  • জরায়ুর আশেপাশে চুলকানি ও জ্বালাপোড়া
  • প্রস্রাব ও সহবাসের সময়ে ব্যথা, জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি অনুভব
  • তলপেটে ব্যথা
  • দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
  • ধূসর বা ছাই রঙের স্রাব
  • সবুজ রঙের স্রাব
  • হলুদ রঙের স্রাব
  • সবুজের সাথে হলুদ মেশানো রঙের ঘন / পাতলা / ফেনাফেনা স্রাব যাওয়া
  • জরায়ু লাল হওয়া বা ফুলে যাওয়া
  • দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময়ে যোনিপথে রক্তক্ষরণ হওয়া
  • লালচে স্রাব (মাসিকের সময় ছাড়া লালচে স্রাব / রক্ত যাওয়া)
  • সহবাসের পরে রক্তপাত হওয়া
  • মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও লাল স্রাব বা রক্ত যাওয়া
উপরোক্ত লক্ষন গুলির একটি ও দেখা দিলে হেলা ফেলা না করে সাথে সাথে ডাক্তারের শরনাপন্ন হন এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসা গ্রহন করুন।
গর্ভাবস্থায় সাদা স্রাব:
গর্ভাবস্থায় সকল মেয়েরই সাদা স্রাব / লিউকোরিয়ার পরিমাণ বেড়ে যায়।সাদা স্রাব জীবাণুকে যোনিপথ থেকে জরায়ুতে আসতে বাধা দেয়, এবং গর্ভের সন্তানকে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করে।গর্ভাবস্থার প্রথম দিকের চেয়ে শেষের দিকে এর পরিমাণ অনেক বেশি হয় এবং গর্ভাবস্থার শেষ সপ্তাহে সাদা স্রাব কিছুটা আঠালো ধরণের হতে পারে। সে সময়ে স্রাবের রং গোলাপি / লাল হতে পারে ( মেডিকেল ভাষায় একে "শো" বলা হয়)।

গর্ভাবস্থায় মেয়েদের সাধারণ অবস্থার থেকে বেশি স্রাব যাওয়া স্বাভাবিক, এ নিয়ে ভয় পাওয়ার দরকার নেই। তবে সাদা স্রাবের সাথে নিচের লক্ষন গুলো দেখা গেলে অবশ্যয় ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন;
  • অস্বাভাবিক দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব
  • ধূসর, হলুদ, সবুজ কিংবা লালচে কালারের স্রাব
  • প্রস্রাবের সময়ে জ্বালাপোড়া ও ব্যথা হওয়া
  • যৌনাঙ্গে লালচে ভাব, জ্বালাপোড়া বা চুলকানি হওয়া
  • যোনিপথের আশেপাশে চুলকানি বা ব্যথা অনুভব করা
গর্ভবতী হওয়ার লক্ষণ সাদা স্রাব / সাদা স্রাব কি প্রেগন্যান্সির লক্ষণ?
সাদা স্রাব গর্ভধারণ কিংবা প্রেগন্যান্সির গুরুত্বপূর্ন কোনো লক্ষণ বা কারণ নয়। বেশির ভাগ মেয়ের মাসিক শুরু হওয়ার ১-২ বছর আগে থেকে মাসিক শেষ হওয়া (মেনোপজ) পর্যন্ত নিয়মিত সাদা স্রাব হয়। তবে গর্ভাবস্থায় মেয়েদের সাধারণ অবস্থার থেকে বেশি স্রাব যায় এবং এটা স্বাভাবিক।আবার অনেকেই "সাদা স্রাব হলে কি বাচ্চা হয়" এই বিষয়টি নিয়ে দুচিন্তা করেন তাদেরকে বলছি সাদা স্রাব কিছু ভিন্নতা ছারা এটা খুবি স্বাভাবিক।

সাদা স্রাব বন্ধ করার উপায়:
সাদা স্রাব কম বেশি সব মেয়ের এই হয় এর জন্য কোন ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন নেই; তবে যোনিপথকে জীবাণুমুক্ত ও সুস্থ রাখতে নিচের কাজগুলো অবশ্যই মেনে চলুন;
  • যৌনাঙ্গ শুকনো এবং পরিষ্কার রাখবেন
  • মাসিকের সময় জীবাণুমুক্ত ও পরিষ্কার অন্তর্বাস ব্যবহার করুন
  • পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
  • বাদাম বা বাদাম জাতীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন
  • যৌনাঙ্গে সুগন্ধি ওয়েট টিস্যু / পারফিউম ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন
  • সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস ব্যবহার করুন
  • দীর্ঘ সময়ের জন্য টাইট পায়জামা পরা এড়িয়ে চলুন
  • জন্মনিয়ন্ত্রণের পিল এড়িয়ে চলুন (সম্ভব না হলে ডাক্তারের পরমর্শ গ্রহণ করুন)
  • অ্যান্টিবায়োটিক অথবা অ্যান্টিফাঙ্গাল ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার করবেন না
  • যোনিপথের ভিতরে সাবান বা অন্য কোন কিছু দিয়ে পরিষ্কার করবেন না (যৌনিপথ নিজে থেকেই পরিষ্কার থাকে)
  • যৌনাঙ্গের বাহিরে নরমাল সাবান দিয়ে পরিষ্কার করবেন (কোন প্রকার সুগন্ধি যুক্ত সাবান ব্যবহার করবেন না)
  • নিয়মিত জরায়ুর (ভায়া) পরীক্ষা করবেন
এর পরেও যদি সমস্যা হয়ে যায় নিজে নিজে কোন প্রকার এন্টিবায়োটিক খবেন না সরাসরি ডাক্তারের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন যে কোন সমস্যা শুরুতেই নির্মুল করাই ভালো।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url