ম্যাটস কি? ম্যাটস এ ভর্তির যোগ্যতা, পড়ার খরচ এবং ম্যাটস এর চাকরি
ম্যাটস কি?
ম্যাটস (MATS) বলতে এক ধরনের বিশেষায়িত মেডিক্যাল ডিপ্লোমা স্কুলকে বুঝায়। বর্তমানে ১৬ টি সরকারি ম্যাটস রয়েছে এবং ১৩২টি বেসরকারী ম্যাটস রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বেসরকারি ম্যাটস এর অনুমোদন দিয়ে থাকে এবং সরকারি বেসরকারি সকল ম্যাটস বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ (The State Medical Faculty of Bangladesh) এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়। অনুষদ কর্তৃক নির্দিষ্ট সিলেবাস এবং কারিকুলাম অনুসারে ৪ বছর মেয়াদী ম্যাটস কোর্স পরিচালিত হয়।
ম্যাটস পড়ে কি হওয়া যায়?
ম্যাটস পড়ে সরকারি ২য় শ্রেণীর কর্মকর্তা (১০ম গ্রেড) হওয়া যায়। একজন শিক্ষার্থী ম্যাটস থেকে ৪ বছর মেয়াদি এই কোর্সটি সফলভাবে সমপন্ন করার পর Diploma of Medical Faculty Degree অর্জন করে থাকে। এই DMF ডিগ্রিধারীগণ ডাক্তার হিসেবে রোগিদের ৬০টি মেডিসিন প্রেসকিপ্ট করতে পারেন। একারণে একজন DMF ডাক্তার প্রাইভেট চেম্বার করেও উপার্জন করতে পারেন। ফলে এই কোর্স সমপন্ন করলে চাকরির পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবেন সহজেই।
ম্যাটস এর চাকরি
- স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং পরিবার পরিকল্পনা মন্তণালয় কর্তৃক পরিচালিত উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে,
- ইউনিয়ন স্বাস্হ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে,
- বাংলাদেশ বিমান বাহিনী, সেনাবাহীনিতে উপসহকারি কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার হিসেবে,
- বিভিন্ন স্বায়ত্ব-শাসিত প্রতিষ্ঠান যেমন পিডিবি, তিতাস গ্যাস, বিআইডব্লিউটিসি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ হয়ে থাকে,
- জেলা সদর হাসপাতাল
- উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
- কমিউনিটি ক্লিনিক
- চিকিৎসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রশিক্ষক/ ইন্সট্রাকটর হিসেবে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ রয়েছে। যেমন- মেডিকেল কলেজ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ, ম্যাটস ইন্সটিটিউট, বিভিন্ন সরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি।
- বেসরকারি হাসপাতালসমূহে,
- বেসরকারি ক্লিনিক এ,
- বিভিন্ন এনজিও যেমন ব্রাক, আইসিডিডিআরবি, সেভ দ্যা চিল্ড্রেন ইত্যাদিতে,
- বেসরকারি পর্যায়ের ডায়াগনস্টিক সেন্টারে,
- বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি এবং গার্মেন্টস এ প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য প্রাথমিক চিকিৎসক হিসেবে,
- চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রায় সকল বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মক্ষেত্রের সুযোগ রয়েছে। যেমন- ম্যাটস ইন্সটিটিউট, মেডিকেল কলেজসমূহ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে, বিভিন্ন বেসরকারি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসমূহ চাকরির সুযোগ রয়েছে।
ম্যাটস ভর্তি যোগ্যতা
ম্যাটস এ ভর্তির যোগ্যতা: ম্যাটস এ ভর্তি হতে হলে আপনাকে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জীববিজ্ঞানসহ এসএসসি / সমমান পরীক্ষায় সর্বনিম্ম জিপিএ ২.৫ (পয়েন্ট) পেয়ে উত্তীর্ণ হতে হবে। এস.এস.সি পাশের পর সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত গ্যাপ গ্রহণযোগ্য হবে। ৫ বছরের আগে যারা পাঁস করেছেন তারা ম্যাটস এ ভর্তি হতে পারবেননা।
ম্যাটস এর সাবজেক্ট
৪র্থ বর্ষে:
১ বছর ইন্টার্নী: ৯ মাস জেলা সদর হাসপাতালে এবং ৩ মাস উপজেলা হাসপাতাল ইন্টার্নী করতে হবে।
ম্যাটস পড়ার খরচ
সরকারী প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে ম্যাটস পড়ার খরচ: ভর্তি ফি সহ ৪ বছরে ২০,০০০ টাকা লাগবে। অন্যদিকে, বেসরকারি ম্যাটস পড়ার খরচ: প্রতিষ্ঠানভেদে গড়ে ১,৫০,০০০ টাকা থেকে ৩,৫০,০০০ টাকা হয়ে থাকে। অন্যান্য সকল খরচ যেমন হোস্টেল ফি, ৪ বছরের খাবার ফি এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম সহ একজন স্টুডেন্টের প্রায় ৪,০০০০০ থেকে ৬,০০০০০ টাকা খরচ হয় (প্রতিষ্ঠান ও স্থান ভেদে)।
ম্যাটস পড়ার সুবিধা
অনেকে জানতে চান ম্যাটস এবং নার্সিং এর মধ্যে কোনটিতে পড়লে বেশি সুবিধা পাওয়া যায়?
উত্তর: বর্তমানে নার্সের চাহিদা অনেক বেশি। বিগত কয়েক বছর ধরে পেশাগত পোস্টে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ পেয়ে চলেছে নার্সরা। প্রাইভেট সেক্টরে বিভিন্ন হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং এনজিওগুলোতেও নার্স নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনেক হয়ে থাকে। সেতুলনায় ম্যাটস এর নিয়োগ খুবি কম হয়ে থাকে। তাছাড়া নার্সিং পড়ার পর উচ্চ শিক্ষার ব্যাবস্থা থাকলেও ম্যাটস এর ক্ষেত্রে নেই। তবে নার্সিং পড়তে হলে নূন্যতম এইচ.এস.সি পাশ করতে হয় কিন্তু ম্যাটস এ ভর্তি হতে এস.এস.সি পাশ করতে হয়।
ম্যাটস এর উচ্চশিক্ষা
উপরোক্ত ভার্সিটিগুলোতে ইন্টার পাশ করা স্টুডেন্টদের সাথে ম্যাটস থেকে পাশ করা স্টুডেন্টরাও ভর্তির সুযোগ পেয়ে থাকে। অনেকে জানতে চান ম্যাটস থেকে বিসিএস দেয়া যায় কিনা? ম্যাটস থেকে বিসিএস দেয়া যায় না, তবে আপনি যদি কোনো বেসরকারি ইউনিভার্সিটি থেকে অনার্স পাশ করেন ম্যাটস থেকে পাশ করার পর, তাহলে বি.সি.এস পরীক্ষা দিতে পারবেন।