ফোটা ফোটা প্রস্রাবের কারণ এবং বন্ধের উপায়

ফোটা ফোটা প্রস্রাবের কারণ এবং বন্ধের উপায়

ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়, তবে এটি নারী বা যেকোনো বয়সের মানুষের মধ্যেও হতে পারে। এই সমস্যায় প্রস্রাবের সময় কিছু ফোঁটা প্রস্রাব শেষের দিকে পড়ে, যা অস্বস্তিকর এবং অনেক সময় বিব্রতকরও হতে পারে। সাধারণত প্রোস্টেটের বৃদ্ধির কারণে এটি ঘটে, তবে অন্যান্য কারণও থাকতে পারে, যেমন মূত্রনালির সংক্রমণ, মূত্রাশয়ের দুর্বলতা, বা কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের প্রভাব। এ সমস্যার সমাধানে বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যা সঠিকভাবে মেনে চললে ফোটা ফোটা প্রস্রাব বন্ধ করা সম্ভব।


ফোটা ফোটা প্রস্রাবের কারণ

ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যাটি সাধারণত কিছু নির্দিষ্ট কারণে হয়। এর মধ্যে প্রধান কারণগুলো হলো:

  • প্রোস্টেট গ্রন্থির বৃদ্ধি: পুরুষদের প্রোস্টেট গ্রন্থি বয়স বাড়ার সাথে সাথে বড় হতে থাকে। এটি মূত্রনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রস্রাবের গতি ধীর হয়ে যায় এবং পুরোপুরি বের হতে পারে না।
  • মূত্রনালির সংক্রমণ (UTI): মূত্রনালির সংক্রমণ হলে প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বালা এবং ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • মূত্রাশয়ের দুর্বল পেশী: মূত্রাশয়ের পেশী দুর্বল হয়ে গেলে তা পুরোপুরি সংকুচিত হতে পারে না, ফলে প্রস্রাব পুরোপুরি বের হতে পারে না।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য: কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে পেটের চাপ বেড়ে যায় এবং মূত্রনালির ওপর প্রভাব ফেলে, ফলে প্রস্রাবের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • ডায়াবেটিস: ডায়াবেটিসের কারণে মূত্রনালির পেশি দুর্বল হয়ে যেতে পারে, ফলে প্রস্রাব ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যায়।

এই কারণগুলোকে মাথায় রেখে সমস্যা সমাধানের জন্য নিচের উপায়গুলো মেনে চলতে পারেন।


ফোটা ফোটা প্রস্রাব বন্ধের উপায়

ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যার সমাধানে বেশ কয়েকটি কার্যকর উপায় রয়েছে। সেগুলো মেনে চললে সমস্যাটি ধীরে ধীরে কমতে পারে।

১. পর্যাপ্ত পানি পান করুন

প্রস্রাবের সমস্যা এড়াতে দৈনিক পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই মনে করেন বেশি পানি পান করলে প্রস্রাবের সমস্যা বাড়বে, কিন্তু আসলে তা নয়। পানি শরীরের বর্জ্য ও টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মূত্রনালির সংক্রমণ রোধ করা সম্ভব এবং প্রস্রাব স্বাভাবিকভাবে বের হতে সাহায্য করে।


২. প্রোস্টেট পরীক্ষা করান

যদি আপনি বয়স্ক হন এবং ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে প্রোস্টেট পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। প্রোস্টেটের আকার বৃদ্ধি পেলে এটি মূত্রনালির ওপর চাপ সৃষ্টি করে, যার ফলে প্রস্রাব পুরোপুরি বের হতে পারে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রোস্টেটের আকার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন।


৩. কেগেল ব্যায়াম

কেগেল ব্যায়াম মূত্রাশয়ের পেশীকে শক্তিশালী করতে সাহায্য করে। এটি মূত্র নিয়ন্ত্রণে থাকা পেশীকে উন্নত করে এবং প্রস্রাবের সময় ফোটা ফোটা হওয়া বন্ধ করে। কেগেল ব্যায়ামের জন্য প্রথমে প্রস্রাব বন্ধ করার মতো অনুভূতি তৈরি করতে হবে, তারপর সেই পেশীকে সংকুচিত করে ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে। দিনে কয়েকবার এই ব্যায়ামটি করতে হবে।


৪. মূত্রনালির সংক্রমণ প্রতিরোধ

মূত্রনালির সংক্রমণ ফোটা ফোটা প্রস্রাবের একটি বড় কারণ হতে পারে। সংক্রমণ হলে প্রস্রাবে জ্বালা, ব্যথা এবং ফোঁটা ফোঁটা করে প্রস্রাব পড়ার সমস্যা দেখা দেয়। সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা, যৌনস্বাস্থ্য বজায় রাখা এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।


৫. প্রস্রাবের সময় ধীরে ধীরে চাপ দিন

অনেক সময় দ্রুত প্রস্রাব করতে গিয়ে মূত্রাশয় পুরোপুরি খালি হয় না। এর ফলে প্রস্রাব ফোটা ফোটা করে পরে। প্রস্রাব করার সময় ধীরে ধীরে এবং সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে প্রস্রাব করুন। যখন মনে হবে প্রস্রাব শেষ হয়ে গেছে, তখনও কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করুন এবং পুনরায় একটু চাপ দিয়ে দেখুন মূত্রাশয় সম্পূর্ণ খালি হয়েছে কি না।


৬. ক্যাফেইন ও অ্যালকোহল পরিহার

ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল মূত্রনালিকে উত্তেজিত করে এবং প্রস্রাবের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যা থাকলে চা, কফি, কোমল পানীয় এবং অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা উচিত। এগুলো মূত্রনালিতে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে এবং সমস্যা আরও তীব্র হয়ে উঠতে পারে।


৭. ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার

ফাইবারযুক্ত খাবার যেমন শাকসবজি, ফলমূল এবং শস্যজাতীয় খাবার খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, যা মূত্রনালির ওপর চাপ কমাতে সাহায্য করে। কোষ্ঠকাঠিন্য কম থাকলে ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যা হ্রাস পায়। ফলে প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় পর্যাপ্ত ফাইবার রাখার চেষ্টা করুন।


৮. নিয়মিত হালকা ব্যায়াম

শরীরকে সক্রিয় রাখলে পেশীগুলো শক্তিশালী হয়, যা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন নিয়মিতভাবে হালকা ব্যায়াম, যেমন হাঁটা বা সাঁতার কাটার মাধ্যমে মূত্রাশয়ের পেশী সক্রিয় রাখা সম্ভব। এছাড়া এই ব্যায়ামগুলো প্রোস্টেটের বৃদ্ধিও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।


৯. সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখা

খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনও ফোটা ফোটা প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। অতিরিক্ত মশলাদার খাবার, ফাস্টফুড এবং প্রসেসড খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ এগুলো শরীরের পানি শূন্যতা তৈরি করে এবং মূত্রনালির সমস্যা বাড়িয়ে দেয়। পুষ্টিকর খাবার যেমন ফলমূল, শাকসবজি এবং পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ করলে প্রস্রাবের সমস্যা কমে।


১০. চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ

যদি ঘরোয়া উপায়ে বা প্রাথমিক চিকিৎসায় ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যা না কমে, তাহলে একজন ইউরোলজিস্টের সঙ্গে পরামর্শ করা প্রয়োজন। মূত্রনালির সমস্যা বা প্রোস্টেটের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ওষুধ বা বিশেষ চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে সার্জারির প্রয়োজনও হতে পারে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।


উপসংহার

ফোটা ফোটা প্রস্রাবের সমস্যা বিরক্তিকর এবং কষ্টকর হতে পারে, তবে এটি সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য এবং চিকিৎসাযোগ্য। সঠিক জীবনযাপন, নিয়মিত ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে এই সমস্যাটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যাদের এই সমস্যা আছে, তারা ধৈর্য ধরুন এবং উপরের পরামর্শগুলো মেনে চলুন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url