পিত্তথলি রোগের লক্ষণ কী কী? বিস্তারিত জানুন

পিত্তথলি রোগের লক্ষণ কী কী? বিস্তারিত জানুন

পিত্তথলি (Gallbladder) আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যা যকৃত (Liver) থেকে উৎপন্ন হওয়া পিত্তরস (Bile) সংরক্ষণ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। তবে অনেক সময় পিত্তথলি বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয়, যা ব্যথা, হজমের সমস্যা বা এমনকি জটিল অস্ত্রোপচারেরও কারণ হতে পারে। এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো পিত্তথলি রোগের লক্ষণ কী কী এবং কীভাবে আপনি সতর্ক হতে পারেন।


পিত্তথলি রোগ কী?

পিত্তথলি রোগ বলতে মূলত পিত্তথলিতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা বোঝানো হয়, যার মধ্যে পাথর হওয়া (Gallstones), প্রদাহ (Cholecystitis), পিত্তনালীতে বাধা, পলিপ, ইনফেকশন বা কখনও ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত রোগ হলো পিত্তথলিতে পাথর জমা হওয়া।


পিত্তথলি রোগের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গ

১. তলপেটে ডান পাশে ব্যথা

পিত্তথলির সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গ হলো তলপেটের ডান পাশে হালকা থেকে শুরু করে তীব্র ব্যথা। এই ব্যথা অনেক সময় পিঠে বা ডান কাঁধেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

২. চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পর অস্বস্তি

চর্বিযুক্ত খাবার খাওয়ার পরে যদি আপনার পেট ভারী লাগে, বমি বমি ভাব আসে বা গ্যাসের সমস্যা হয়, তাহলে পিত্তথলির অসুস্থতার ইঙ্গিত হতে পারে।

৩. বমি বা বমি বমি ভাব

পিত্তথলিতে পাথর থাকলে বা ইনফেকশন হলে প্রায়ই রোগীরা বমি বা বমি বমি ভাব অনুভব করে থাকেন।

৪. জ্বর এবং কাঁপুনি

পিত্তথলিতে ইনফেকশন হলে (Acute Cholecystitis) শরীরে জ্বর এবং কাঁপুনি দেখা দিতে পারে, যা চিকিৎসার জন্য জরুরি ইঙ্গিত।

৫. পেট ফোলা বা গ্যাসের সমস্যা

নিয়মিত পেট ফোলা, ডায়রিয়া বা কোষ্ঠকাঠিন্যও পিত্তথলির সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।

৬. ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস)

যদি পিত্তনালী পাথর দ্বারা বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে পিত্তরস শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর ফলে ত্বক ও চোখের সাদা অংশ হলুদ হতে পারে। এটি গুরুতর লক্ষণ এবং অবিলম্বে চিকিৎসার প্রয়োজন।


অন্যান্য কম প্রচলিত উপসর্গ

  • হালকা জ্বর ও দুর্বলতা
  • হজমের সমস্যা
  • মুখে তিতা ভাব
  • ক্ষুধা কমে যাওয়া


পিত্তথলি রোগ কীভাবে শনাক্ত করা যায়?

পিত্তথলির সমস্যার সঠিক নির্ণয়ের জন্য নিচের পরীক্ষাগুলো করা হয়:

  • আলট্রাসোনোগ্রাফি (Ultrasonography) – পাথর বা সিস্ট নির্ধারণে প্রধান উপায়।
  • CT Scan বা MRI – জটিল ক্ষেত্রে বা ক্যান্সার সন্দেহে।
  • Blood Test – সংক্রমণ বা ইনফেকশন শনাক্তে সাহায্য করে।
  • HIDA Scan – Gallbladder এর কার্যক্ষমতা জানার জন্য।


পিত্তথলির সমস্যায় কী করবেন?

যদি উপরের উপসর্গগুলো দীর্ঘ সময় ধরে দেখা যায় বা হঠাৎ তীব্র ব্যথা শুরু হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আপনার যদি মনে হয় আপনি পাথরের সমস্যায় ভুগছেন, তাহলে আপনি আগে জেনে নিতে পারেন –


চিকিৎসা কীভাবে হয়?

চিকিৎসা নির্ভর করে রোগের ধরণ ও জটিলতার উপর। সাধারণত নিচের চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়:

  • ঔষধ সেবন: ছোট পাথরের ক্ষেত্রে কিছু ওষুধের মাধ্যমে ব্যথা উপশম করা হয়।
  • লাইফস্টাইল পরিবর্তন: চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলা, নিয়মিত খাওয়া-দাওয়া।
  • সার্জারি (Cholecystectomy): পিত্তথলি কেটে ফেলা সবচেয়ে কার্যকর এবং স্থায়ী সমাধান, বিশেষ করে পাথরের জন্য।


উপসংহার

পিত্তথলি রোগ একটি প্রচলিত কিন্তু অবহেলাযোগ্য স্বাস্থ্য সমস্যা না। সময়মতো লক্ষণ চিনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারলে অনেক জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আপনি যদি উপরের যেকোনো উপসর্গে ভোগেন, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং প্রয়োজনে পিত্তথলির কার্যকারিতা পরীক্ষা করান।

সঠিক জীবনযাপন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা আপনাকে পিত্তথলি রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।


Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url