পাদ কাকে বলে? পাদ কয় প্রকার ও কি কি এবং চিকিৎসাসহ পাদের কবিতা

পাদ কাকে বলে?

পাকস্থলীতে লুকিয়ে থাকা দুষ্ট বায়ু পায়ুপথ দিয়ে নির্গত হওয়ার প্রক্রিয়াকে পাদ বলে।

আমরা যখন খাবার গ্রহণ করি, তখন খাবারের সাথে প্রচুর বায়ু পেটে যায়। এছাড়াও পাকস্থলীর হজম ক্ষমতা কম হলে খাবার হজম হতে দেরি হয় ফলে হজম হবার আগেই পচে গ্যাস তৈরি হয়। এই উভয় বায়ু বা গ্যাস পায়ুপথ দিয়ে শরীর থেকে বেরিয়ে যায়। এটি একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, যা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয়।

পেটের গ্যাসের কারণ কী?

পেটের গ্যাসের কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • খাদ্য হজম: আমাদের পেটে মিষ্টি, স্টার্চি এবং আঁশযুক্ত খাবারের কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) হজম এবং শোষণ করার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু এনজাইমের অভাব থাকলে খাদ্য হজম প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে যাকে বদ হজম বলে। এসময় ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া খাদ্যকণা ভেঙ্গে হাইড্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস তৈরি করে। কিছু মানুষের পেটে মিথেন গ্যাসও তৈরি হয়।
  • গিলে ফেলা বাতাস: যখন আপনি খান, পান করেন, চিবিয়ে খান বা ধূমপান করেন, তখন আপনি অজান্তে বাতাস (অক্সিজেন, নাইট্রোজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড ধারণ করে) গিলে ফেলেন। যাদের আলগা দাঁত থাকে তাদের ক্ষেত্রে এটা খুব বেশি হয়। বেশির ভাগ মানুষই মুখ দিয়ে গিলে ফেলা বাতাসকে ঢেকুর তোলার মাধ্যমে বের করে দেয়। কিন্তু আংশিকভাবে কিছু বাতাস খাবারের সাথে পেটে আটকে যায়, যা পরবর্তীতে অন্যান্য গ্যাসের সাথে পাদ হয়ে বের হয়।

যে খাবার এবং অভ্যাসগত কারণে অত্যধিক গ্যাস উৎপাদিত হয়:

  • আচরণগত কারণে, যেমন- চিবানো, মদ্যপান এবং কথা বলার সময় বাতাস গিলে ফেলা।
  • অনেক বেশি গ্যাস উৎপাদনকারী খাবার খাওয়া (মটরশুঁটি, আলু, ভুট্টা, পেঁয়াজ, আপেল এবং উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার)।
  • হজমের সমস্যা, যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস), ল্যাকটোজ অসহিষ্ণুতা এবং সিলিয়াক রোগ থাকলে।
  • অন্ত্রের সংক্রমণ, যেমন গিয়ার্ডিয়াসিস, যা অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটায়।
  • ওষুধ বা দীর্ঘস্থায়ি ব্যাধি যা অন্ত্রকে ধীর করে দেয়, যেমন আইবিএস, ডায়াবেটিস এবং স্ক্লেরোডার্মা।

পাদ কয় প্রকার?

পাদ দুই প্রকার। যথা: ১. গিলে ফেলা বাতাস থেকে সৃষ্ট পাদ এবং ২. পেটের মধ্যে উৎপন্ন গ্যাস থেকে সৃষ্ট পাদ।


পাদের উপকারিতা:

আমরা সকলেই জানি যে, বড় থেকে ছোট, ধনী থেকে গরীব সকল শ্রেনীর মানুষের পাদ হয়ে থাকে।
আমাদের পাকস্থলীতে জমে থাকা গ্যাসই হলো পাদ। এই গ্যাসের কিছুটা খাবার থেকে, কিছুটা রক্ত থেকে আর কিছুটা পাকস্থলীর ভিতর থাকা ব্যাকটেরিয়ার রস থেকে সৃষ্টি হয়। পাদে ৪% অক্সিজেন, ৯% কার্বন ডাই অক্সাইড, ৭% মিথেন, ৫৯% নাইট্রোজেন এবং ১ শতাংশ মারকেপটান ও হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস থাকে, যা পাদের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী।

বিজ্ঞানীদের মতে, একজন মনুষ দিনে প্রায় ৫০০ মি.লি থেকে ১ লিটার গ্যাস পাদের মাধ্যমে ত্যাগ করে থাকেন। সব দিক বিবেচনা করে মানবদেহে পাদের উপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১। পাদ এর মাধ্যমে দেহের যাবতীয় গ্যাস নির্গত হয়, এই গ্যাস নির্গত হয় স্বাভাবিক উপায়ে কারো কোন ক্ষতি না করে। 
২। যদি কৈউ পাদ আটকে রাখে তবে তার পেট ফুলে যাবে, এবং হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
৩। পাকস্থলীর ক্রিয়া প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হবে।
৪। পাদ দিতে না পারলে মানুষের পেট মিথেন গ্যাসে ভরে যেতো, তখন মানুষ মহাকাশে উড়ে বেরাতে।
৫। পাদের গন্ধ মানুষকে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, স্মৃতি হারানো প্রভিতী রোগ থেকে রক্ষা করে।
৬। বৃহদান্ত্রে ব্যাকটেরিয়ার ফারমেন্টশনের ফলে প্রচুর গ্যাস সৃষ্টি হয়, আর এই গ্যাসের পরিমান বেশি হলে কিডনির উপর ক্ষতিকর প্রভাব সৃষ্টি করে। মানবদেহ পাদের মাধ্যমে এই গ্যাসগুলো বের করে দেয়।
৭। পাদ পরিপাকতন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে।
৮। পাদ কোলনের জন্য ভাল।
৯। পেট ফাপ হওয়া থেকে রক্ষা করে ফলে খাবার ভালভাবে হজম হয় এবং পেটকে সুস্থ রাখে।
১০। এক কথায় পাদ মানব দেহের জন্য খুবি উপকারী।

পাদে দুর্গন্ধ হয় কেন?

পাদে দুর্গন্ধ হয় যেসব কারণে -

  • সালফারযুক্ত খাবার খেলে (প্রধানত সালফার ডাই অক্সাইড পাদের দুর্গন্ধের জন্য দায়ী)
  • উচ্চ ফাইবারযুক্ত খাবার খেলে (মটরশুটি, কচুর লতি, বরবটি, শিম, বাঁধাকপি ইত্যাদি)
  • মাংশ বেশি খেলে
  • পেটের ক্ষত থাকলে (ব্যাকটেরিয়া কিছু বিশেষ প্রজাতি বৃহদান্ত্রের জন্য ক্ষতিকর, এদের সংখ্যা বেড়ে গেলে এরা পেটের ভেতর ক্ষত সৃষ্টি করে)
  • পেটের অসুখ (আমাশয়, আলসার, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদি)
  • বদহজম
  • এন্টিবায়োটিক সেবন করলে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য
  • কোলন ক্যান্সার

পাদের দুর্গন্ধ দূর করার উপায়:

পাদের গুর্গন্ধ দূর করার উপায় সমূহ নিচে দেয়া হয়েছে

  • যে কোন খাবার তাড়াহুড়ো করে খাবেন না, সময় নিয়ে মনোযোগ সহকারে খাবেন।
  • খাবার যতটা সম্ভম চিবিয়ে খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • একবারে বেশি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, প্রয়োজনে বারবার অল্প অল্প করে খাবার খাবেন।
  • জক বা বোতল থেকে সরাসরি জল খাবেন না, গ্লাসে চুমুক দিয়ে জল থাবেন।
  • প্রতিদিন সুষম খাদ্য খাবেন।
  • যে খাবার খেলে আপনার টয়লেট ক্লিয়ার হয় না, সে খাবার গুলো পরিহার করুন।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
  • ধূমপানের অভ্যাস থাকলে তা পরিহার করুন।

কখন ডাক্তার দেখাবেন?

ডাক্তারের সাথে কথা বলুন যদি গ্যাস বা গ্যাসের ব্যথা এতটা স্থায়ী বা তীব্র হয় যে তারা আপনার দৈনন্দিন জীবনে ভালভাবে কাজ করার ক্ষমতাকে হস্তক্ষেপ করে। এছাড়া নিম্নোক্ত লক্ষণ বা উপসর্গগুলির কোনটি দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করবেন।
  • রক্তাক্ত মল
  • অসামঞ্জস্য মল (কখনো শক্ত, কখনো নরম)
  • মলত্যাগের ফ্রিকোয়েন্সি পরিবর্তন (মল ত্যাগের সময় প্রথমে অনেক শক্ত এবং কিছুটা মল ত্যাগের পর ডায়রিয়ার ন্যায় পাতলা হওয়া)
  • ওজন কমতে থাকলে
  • কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া
  • ক্রমাগত বা বারবার বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া

পাদের কবিতা

জনসচেতনতামূলক একটি পাদের কবিতা নিচে দেয়া হয়েছে।

পাদ কবিতা
খোকার বয়স সাত
দেয় পাদ সরাত সরাত

ওমা একি?
খোকা কাদে কেন?

সবাই হাসে, খোকা যখন পাদে।
তাই লজ্বায়, রাগে আর দুঃখেঃ
খোকা আর পাদেনা রাখে আটকে।

দিন যায়, রাত যায়;
বছর তিন পেরিয়ে...
হঠাৎ কি হলো আজ!
পাড়াজুড়ে ছয়লাব!

পাড়ার মোল্লা এসে-
খোকার পেটটা দ্যাখে,
দ্যাখে আরো চোখ-মুখ
বলে ওরে..... শোন দেখি,
আন গাড়ি তাড়াতারি
নিতে হবে ডাক্তারবাড়ি।

কিজানি কি হয়, বুকে সবার ভয়
পা কাপে দাঁড়িয়ে,
খোকার বাবার।

ডাক্তার এসে কয়,
"আচ্ছা হয়েছিল কি? বলুনতো?"
বাবা বলে, "ডাক্তারমশাই
পেট ছিলো ফেপে,
দিত পাত চেপে,
হলো কি আজ হঠাৎ... জানা নেই কারো।..."

হুম বুঝলাম, দেখলাম
এই হলো রিপোর্ট....
করেছেন দেরি তাই,
আর নাই আর নাই

কি নাই? ডাক্তার মশাই??
কিডনিটা ভালো নাই।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url